যাকাত দেওয়ার নিয়ম এবং যাকাতের মাসায়েল যেনে নিন

যাকাত দেওয়ার নিয়ম সর্ম্পকে আমাদের মুসলমানদের সকলের জানাথাকা প্রয়োজন।যাকাত কখন দিতে হয় এবং যাকাত না দিলে কি হয় এই পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পরলে যাকাত সর্ম্পকে জানতে পারবেন বিস্তারিত।

যাকাত

যাকাত দেওয়ার নিয়ম এবং কতটাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে এই বিষয় গুলো জানতে পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে পরেন।১০০% যাকাত সর্ম্পকে জানতে পারবেন।

পোস্টসূচীপত্র:যাকাত দেওয়ার নিয়ম এবং যাকাতের মাসায়েল যেনে নিন

যাকাত হিসাব করার তরীকা ও মাসায়েল

যে সকল অর্থ সম্পদে যাকাত আসে সে অর্থ সম্পদের ৪০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত আদায় করা ফরজ।মূল্যের আকারে নগদ টাকা দ্বারা বা সেই অর্থ দ্বারা কোন আসবাবপত্র ক্রয় করে তা দ্বারাও যাকাত দেয়া যায়।যাকাতের ক্ষেত্রে চন্দ্র মাসের হিসাবে বছর ধরতে হবে।যখনই কোন ব্যক্তি নেছাব পরিমাণ অর্থ সম্পদের মালিক হবে সেই মুহূর্ত থেকেই ঐ ব্যক্তির যাকাতের বছরের শুরু ধরতে হবে।

আরো পড়ুন : শবে মেরাজ ও শবে বরাতের আমল যেনে নিন

সোনা এবং রুপার মধ্যে যদি ব্রঞ্জ,রাং,দস্তা,তামা ইত্যাদি মিশ্রণ থাকে আর সে মিশ্রণ সোনা রুপার চেয়ে কম হয় তাহলে পুরোটাকেই সোনা রুপা ধরে যাকাতের হিসাব করতে হবে।মিশ্রিত দ্রব্যের কোন প্রকার ধর্তব্য হবে না। তবে যদি একত্র মিশ্রিত দ্রব্য সোনা রুপার চাইতে অধিক হয়, তাহলে তাকে আর কোনভাবে সোনা রুপা ধরা যাবে না। বরং তাকে ওই মিশ্রিত দ্রব্যই ধরতে হবে।

যাকাতের হিসাব সঠিকভাবে করার সময়  সোনা,রুপা,ব্যবসায়ীক পণ্য মূল্য ধরতে হবে তখনকার অর্থাৎ ওয়াজিব হওয়ার সময়।বাজারদর হিসাবে এবং সোনা রুপা ইত্যাদি যে স্থানে রয়েছে সেই স্থানের দাম ধরে যাকাত এর হিসাব করতে হবে।

কারোর শেয়ারের মূল্য ধরার ক্ষেত্রে মাসআলা হল-যারা কোম্পানির লভ্যাংশ অর্জন করার উদ্দেশ্যে নয় বরং শেয়ার ক্রয় করেছেন শেয়ার বেচা-কেনা করে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে,তারা শেয়ারের বাজার দর অর্থাৎ মার্কেট ভ্যালু ধরে যাকাত হিসাব করবেন।আর শেয়ার ক্রয় করার সময় যদি মূল উদ্দেশ্য থাকে কোম্পানি থেকে লভ্যাংশ অর্জন করা এবং 

সাথে সাথে এ উদ্দেশ্যও থাকে যে,শেয়ারের ভালো দর বাড়লে বিক্রি করে দিবে,তাহলে যাকাত হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দরের যে অংশ যাকাতযোগ্য অংশ সম্পদের বিপরীতে আছে তার উপর যাকাত আসবে,অবশিষ্ট অংশের উপর যাকাত আসবে না।উদাহরণ স্বরূপ শেয়ারের মার্কেট ভ্যালু অর্থাৎ বাজার দর ১০০ টাকা, তার মধ্যে ৬০ ভাগ কোম্পানির বিল্ডিং

আরো পড়ুন : নামাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য

মেশিনারিজ ইত্যাদির বিপরীতে,আর ৪০ ভাগ কোম্পানির নগদ অর্থ,কাঁচামাল ও তৈরি মালের বিপরীতে,তাহলে যাকাতের হিসাব করার সময় শেয়ারের বাজার দর অর্থাৎ,১০০ টাকার ৬০ ভাগ বাদ যাবে।কেননা সেটা এমন অর্থ সম্পদের বিপরীতে যার উপর যাকাত আসে না।অবশিষ্ট ৪০ ভাগের উপর যাকাত আসবে।

যাকাত দাতার যে পরিমাণ অর্থ ঋণ আছে সেই পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে বাকিটার হিসাব করে যাকাত আসবে।ঋণ পরিমাণ অর্থ বাদ দিয়ে যদি যাকাতের নেছাব পূর্ণ না হয় তাহলে যাকাত ফরজ হবে না।তবে এ বিষয়ে হযরত মাওলানা মুফতী তাকী ওসমানী সাহেব বলেছেন,যে লোন নিয়ে বাড়ি করা হয় বা যে লোন নিয়ে মিল ফ্যাক্টরি তৈরি করা হয় মিল ফ্যাক্টরির মেশিনারিজ ক্রয় করা হয়

এমন ভাবে যেসব লোন নিয়ে এমন কাজে নিয়োগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে না-যেমন:বাড়ি ও ফ্যাক্টরি বা ফ্যাক্টরির মেশিনারিজের মূল্যের উপর যাকাত আসে না।হ্যাঁ, লোন নিয়ে  যে কাজে  বিনিয়োগ করা হয় যার মূল্যের উপর যাকাত আসে;যেমন:লোন নিয়ে ফ্যাক্টরির কাঁচামাল ক্রয় করল এখানে কাঁচামালের মূল্যের উপর যাকাত আসে। এরক ক্ষেত্রে এ লোন পরিমাণ অর্থ যাকাতের হিসাব থেকে বাদ যাবে।মুফতী তাকী ওসমানী সাহেব এই মাসায়েল টিকে শক্তিশালী যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত করেছেন, অতএব তার মতটি গ্রহণ করার মধ্যেই সতর্কতা রয়েছে।

কোন ব্যক্তির নিকট যাকাতদাতার টাকা পাওনা থাকলে সে পাওনা টাকার যাকাত দিতে হবে:

১)কাউকে নগদ টাকা ঋণ দিয়েছে কিংবা ব্যবসায়ের পণ্য বিক্রি করেছে এবং তার মূল্য বাকি রয়েছে।এরূপ পাওনা কয়েক বছর পর উসুল হলে যদি পাওনা টাকা এত পরিমান হয় যাতে যাকাত ফরজ হয়,তাহলে অতীত বছর সমূহের যাকাত দিতে হবে।যদি একত্রে উসুল না হয়-ভেঙে ভেঙে উসুল হয়, তাহলে ১১ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ হলে যাকাত দিতে হবে। 

এর চাইতে কম পরিমাণ উসুল হলে সেই অর্থের যাকাত ওয়াজিব হবে না।তবে অল্প অল্প মাত্রায় সেই পরিমাণে পৌঁছে গেলে তখন সেই অর্থে যাকাত ওয়াজিব হবে।আর যে মুহূর্তে ওয়াজিব হবে তখন অতীতের সকল বছরের যাকাত একসাথে পরিশোধ করতে হবে আর যদি এরকম পাওনা টাকা নেছাবের চেয়ে পরিমাণে কম হয় তাহলে যাকাত ওয়াজিব হবে না।

আরো পড়ুন : তারাবির নামাজের দোয়া

২)নগদ টাকা ঋণ দেয়ার কারণে বা ব্যবসায়ের পণ্য বাকিতে বিক্রি করার কারণে পাওনা নয় বরং ঘরের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র, কাপড়-চোপড়,চাষাবাদের গরু ইত্যাদি বিক্রয় করেছে এবং তার মূল্য পাওনা রয়েছে,এরূপ পাওনা যদি নেছাব পরিমাণ হয় এবং কয়েক বছর পর উসুল হয় তাহলে ওই কয়েক বছরের যাকাত দিতে হবে।আর যদি ভেঙে ভেঙে উসুল হয় তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত সারে ৫২ তোলা রুপার মূল্য পরিমাণ না হয় ততক্ষণ যাকাত ওয়াজিব হবে না।যখন উক্ত পরিমান উসুল তখন বিগত বছর সমূহের যাকাত দিতে হবে।

৩)মহরের টাকা, পুরস্কারের টাকা,খোলা তালাকের টাকা,বেতনের টাকা ইত্যাদি পাওনা থাকলে এরূপ পাওনা কৌশল উসুল হওয়ার পূর্বে যাকাত ওয়াজিব হবে না।উসুল হওয়ার পর এক বছর মজুদ থাকলে তখন থেকে তার যাকাতের হিসাব শুরু হবে।পাওনা টাকার যাকাত সম্পর্কে উপর উল্লেখিত বিবরণ শুধু তখনই প্রযোজ্য হবে যখন এই টাকা ব্যতীত তার নিকট যাকাতযোগ্য অন্য কোন অর্থ সম্পদ না থাকে।যদি অন্য কোন অর্থ সম্পদ থাকে তাহলে তার মাসআলা ওলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিতে হবে।

যে সমস্ত ঋণ ফিরে পাওয়ার আশা থাকে না,এই সকল ঋণের যাকাত ফরজ হবে না।তবে যদি পায় তাহলে বিগত সমস্ত বছরের যাকাত আদায় করতে হবে।

যদি সোনা এবং রুপার অলংকার স্ত্রীর মালিকানা ভুক্ত করা হয় তাহলে সেই স্বর্ণালংকার স্বামীর সম্পত্তি হিসেব করে যাকাত দেওয়া যাবে না কারণ সেটা স্ত্রীর সম্পত্তি।আর যেসকল অলংকার স্ত্রীকে শুধু মাত্র ব্যবহার করতে দেয়া হয়, মালিক থাকে স্বামী, সেটা স্বামীর সম্পত্তির মধ্যে ধরে যাকাত হিসাব করতে হবে। আর যেগুলোর মালিকানা অস্পষ্ট রয়েছে তাই স্পষ্ট করে নেয়া উচিত। 

যেসব অলংকার স্ত্রী নিজস্ব সম্পদ থেকে তৈরি বা যেগুলো বাপের বাড়ি থেকে অর্জন করে সেগুলো স্ত্রীর সম্পদ বলে গণ্য হবে।মেয়েকে যে অলংকার দেয়া হয় সেটার ক্ষেত্রেও মেয়েকে মালিক বানিয়ে দেয়া হলে সেটার মালিক সে।আর শুধু ব্যবহারের উদ্দেশ্যে দেওয়া হলে মেয়ে তার মালিক নয়।না বালেগা মেয়েদের বিয়ে শাদী উপলক্ষে তাদের নামে যে অলংকার বানিয়ে রাখা হয় বা নাবালেগ ছেলে কিং বা 

যাকাত
মেয়ের বিবাহ শাদীতে ব্যয়ের লক্ষ্যে তাদের নামে ব্যাংকে বা ব্যবসায় যে টাকা লাগানো হয় সেটার মালিক তারা।অতএব সেগুলো পিতা-মাতার সম্পত্তি বলে গণ্য হবে না এবং পিতা-মাতার যাকাতের হিসাবে সেগুলো ধরা হবে না।আর বালেগ সন্তানের নামে শুধু অলংকার তৈরি করে রাখলে বা টাকা লাগালেই তার মালিক হয়ে যায় না যতক্ষণ না সেটা সে সন্তানদের দখলে দেয়া হয়।তাদের দখলে দেয়া হলে তারা মালিক, অন্যথায় সেটার মালিক পিতা-মাতা।

হিসাবের চেয়েও বেশি কিছু যাকাত দিয়ে দেওয়া উত্তম।যাতে কোন রকম কম হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে।প্রকৃতপক্ষে যেটুকু যাকাত না হলেও তাতে দানের সোয়াব পাওয়া যাবে।

কোন কোন সম্পদ এবং কি পরিমানে থাকলে সেই সম্পদের যাকাত ফরজ হয়

যদি কোন ব্যক্তির নিকট শুধু সোনা থাকে-রুপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়িক কোনরকম পণ্য না থাকে তাহলে সাড়ে সাত তোলা১ বা তার বেশি স্বর্ণ থাকলে বছর শেষে তার ওপর যাকাত ফরজ হয়।

যদি কোন ব্যক্তির নিকট শুধুমাত্র রুপা থাকে-সোনা,টাকা পয়সা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছু না থাকে,তাহলে সাড়ে ৫২ তোলা রুপা থাকলে বছর শেষে তার উপর যাকাত ফরজ হয়।যদি কোন ব্যক্তির নিকট কিছু পরিমাণ সোনা এবং এর সাথে কিছু পরিমাণ রুপা বা কিছু টাকা পয়সা বা কিছু ব্যবসায়ীক পণ্য থাকে,তাহলে এক্ষেত্রে 

সোনার সাড়ে সাত তোলা বা রুপার সাড়ে ৫২ তোলা দেখা হবে না বরং সবকিছু মিলে যদি সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তুলার যে কোন একটার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলে বছর শেষে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।বর্তমান সময়ের গ্রামের হিসেবে এক তোলা তথা এক ভরি= ১১.৬৬৫ গ্রাম।

যদি কোন ব্যক্তির নিকট শুধু টাকা পয়সা থাকে-সোনা, রুপা ও ব্যবসায়িক পণ্য কিছু না থাকে তাহলে সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে ৫২ তোলা রুপার যেকোনো একটির সমপরিমাণ মূল্য আসলে সে ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে।কারোর নিকট যদি সোনা,রুপা ও টাকা-পয়সা কিছুই না থাকে শুধুমাত্র ব্যবসায়িক পণ্য থাকে তবে উপরুক্ত পরিমাণ সোনা বা রুপার যেকোনো একটির মূল্যের সমপরিমাণ থাকলে বছরে শেষে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।

আরো পড়ুন : পল্লী বিদ্যুৎ মিটার আবেদন ফি কত যেনে নিন

কারোর নিকট সোনা,রুপা নেই শুধুমাত্র টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়ীক পণ্য রয়েছে, তাহলে সেই টাকা পয়সা ও ব্যবসায়ীক পণ্যের মূল্য মিলিয়ে যদি উক্ত পরিমান সোনা বা রুপার যে কোন একটার সমমূল্যের পরিমাণ হয় তাহলে বছর শেষে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সমূহ

আকেল অর্থাৎ বুদ্ধিসম্পন্ন বালেগ, ছাহেবে নেছাব মুসলমানের উপর বছরে একবার যাকাত আদায় করা ফরজ।যে পরিমাণ অর্থের উপর যাকাত ফরজ হয় তাকে বলা হয় ‘নেছাব’আর এ পরিমাণ অর্থের মালিক কে বলা হয় ‘ছাহেবে নেছাব’।তবে গরীব, পাগল ও না-বা লেগের সম্পত্তিতে যাকাত ফরজ হয় না।

নেছাব পরিমাণ অর্থের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হলে যাকাত ফরজ হয়।এক বছর অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যাকাত ফরজ হয় না।যাকাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ইংরেজি বা বাংলা বছর নয় বরং চন্দ্র বছরের হিসাব অনুযায়ী যাকাত দিতে হয়।

অর্থ সম্পদের সকল অংশের উপর পুরাপুরি এক বছর অতিবাহিত হওয়া কোন শর্ত নয় বরং শুধু মাত্র নেছাব সমপরিমাণ সম্পদের উপর পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হতে হবে।সুতরাং বছরের শুরুতে যে পরিমাণ অর্থ ছিল (নেছাবের চেয়ে কম না হওয়া চাই) বছরে শেষে যদি আগে সম্পত্তি চেয়ে বেশি পরিমাণ সম্পদ দেখা দেয় তাহলে ওই বেশি পরিমাণ সম্পদের উপর ও যাকাত ফরজ হবে।এখানে দেখা যাচ্ছে ওই বেশি পরিমাণ-যেটা বছরের মাঝে যোগ হয়েছে,তার উপরও পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত না হওয়া সত্ত্বেও তার উপর যাকাত ফরজ হয়েছে।

কোন ব্যক্তি যদি বছরে শুরুতে মালেকে নেছাব হয় এবং বছরের শেষেও মালেকে নেছাব থাকে,মাঝখানে সম্পদ কিছু কম হয়ে যায় (নেছাবের ন্যূনতম পরিমাণের চেয়ে কমে গেলেও) তাহলে বছরের শেষে তার নিকট যে পরিমাণ থাকবে সেই অর্থের উপর যাকাত ফরজ হবে।তবে মাঝখানে যদি এরকম অবস্থা হয় যে, মোটেই অর্থ-সম্পদ না থাকে,তাহলে পূর্বের হিসাব বাদ যাবে।পুনরায় যখন নেছাবের মালিক হবে তখন থেকে নতুন হিসাব ধরা হবে এবং সেই সময় থেকেই বছরের শুরু ধরা হবে।

যেসব অর্থ-সম্পদের যাকাত ফরজ হয় না

ব্যবসায়িক পণ্য ছাড়া ঘরে যে সকল ব্যবহার্য আসবাবপত্র,কাপড়-চোপড়,থালা-বাসন,হাড়ি পাতিল,ফ্রিজ,আলমারি,শোকেজ,পড়ার বই ইত্যাদি থাকে তার ওপর যাকাত ফরজ নয়।থাকা বা ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্যে যে ঘর বাড়ি নির্মাণ করা হয় বা ক্রয় করা হয় কিংবা এরকম কোন উদ্দেশ্যে যে জমি ক্রয় করা হয় সে ঘর বাড়ি ও জমির মূল্যের উপর যাকাত আসে না। তবে ব্যবসা বা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় কৃত বাড়ি ও জমির মূল্যের উপর যাকাত ফরজ হয়।

আরো পড়ুন : ফ্রিজের কম্প্রেসার এর দাম যেনে নিন

কোন ব্যক্তির কারখানা থাকলে এবং উক্ত কারখানায় কোন কিছু উৎপাদন হলে সে উৎপাদনের কাজে যে সকল মেশিন, যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ব্যবহৃত হয়, মিল-ফ্যাক্টরিতে যে গাড়ি ও যানবাহন ব্যবহৃত হয় তার মূল্যের ওপর যাকাত ফরজ হয় না বরং যাকাত ফরজ হয় উৎপাদিত মালামাল ওক্রয়কৃত কাঁচামালের উপর।

রিক্সা,বেবি ট্যাক্সি,বাস,ট্রাক, লঞ্চ,স্টিমার ইত্যাদি যা ভাড়ায় খাটানো হয় অথবা অথবা যা দিয়ে অর্থ উপার্জন করা হয়, তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না।তবে এই সকল যানবাহনই যদি কেউ ব্যবসার অর্থাৎ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় করে থাকে তাহলে তার মূল্যের উপর যাকাত ফরজ হবে।

পেশাজীবীরা তাদের পেশার কাজ চালানোর জন্য যে সকল যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ব্যবহার করে থাকে, তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না।যেমন: কৃষকের ট্রাক্টর,ইলেকট্রিসিয়ানদের ড্রিল মেশিন ইত্যাদি।যদি কারোর কাছে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে হীরা,মণি,মুক্তা,ডায়মন্ড ইত্যাদি অলংকার থাকে,তাহলে তার মূল্যের উপর যাকাত আসে না।তবে কেউ যদি এই নিয়তে রাখে যে,এটি একটি সঞ্চয়-প্রয়োজনের সময় বিক্রি করে নগদ অর্থ অর্জন করা যাবে-এরূপ হলে যাকাত ফরজ হবে।

প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ হাতে পাওয়ার পূর্বে তার উপর যাকাত আসে না।তবে যে টাকাটা কর্তৃপক্ষ বাধ্যতামূলক নয় বরং চাকরিজীবী স্বেচ্ছায় কর্তন করায় তার উপর যাকাত আসবে।এটি হলো সরকারি চাকরির প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাসআলা।আর প্রাইভেট কোম্পানির প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা হাতে পাওয়ার পূর্বেও তার যাকাত দিতে হবে।এরকম ভাবেই সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও চাকরিজীবী যদি প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকায় কোন ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে অংশ নেয় তাহলেও তার যাকাত দিতে হবে।না বালেগ ও যে সকল ব্যক্তি পাগল তাদের অর্থ সম্পত্তিতে যাকাত আসে না।

কোন সকল লোকদেরকে বা কোন কোন খাতে যাকাত দেয়া যাবে না

নিম্নে উল্লেখিত লোকদেরকে বা খাতে যাকাত দেয়া যায় না,যদিও দেওয়া হয় এতে যাকাত আদায় হয় না:

  1. যে ব্যক্তির নিকট নেছাব পরিমাণ অর্থ সম্পদ রয়েছে।
  2. যারা সাইয়্যেদ অর্থাৎ, হাসানী, হুসাইন, আলাবী, জাফরী ইত্যাদি।
  3. যাকাত দাতার মা, বাবা, দাদা, দাদি, পরদাদা, পরদাদি, পরনানা, পরনানি ইত্যাদি উপরের সিঁড়ি।
  4. যাকাত দাতার ছেলে, মেয়ে, নাতি, নাতনি, পোতা, পৌ্ত্রি ইত্যাদি নিচের সিঁড়ি।
  5. যাকাতদাতার স্বামী বা স্ত্রী।
  6. অমুসলিমকে যাকাত দেয়া যায় না।
  7. যার উপর যাকাত ফরজ হয়-এরূপ মালদার লোকদের নাবালেক সন্তান।
  8. মসজিদ, মাদ্রাসা বা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল এ সকল নির্মাণ কাজের জন্য।
  9. রাস্তাঘাট, পুল ইত্যাদি নির্মাণ ও স্থাপন কার্যে-যেখানে নির্দিষ্ট কাউকে মালিক বানানো হয় না সেখানে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না।
  10. সরকার যদি যাকাতের মাসআলার নিয়ম অনুযায়ী সঠিক খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় না করে, তবে সরকারের যাকাত ফান্ডে যাকাত দেয়া চলবে না।
  11. যাকাত দ্বারা মসজিদ মাদ্রাসার স্টাফকে যদিও গরীব হয় বেতন দেয়া যাবে না।

যে লোকদেরকে যাকাত দেয়া যায়

  1. ফকির অর্থাৎ, যে সকল ব্যক্তির নিকট সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন সমাধা করার মত সম্বল নেই অর্থাৎ যে সকল ব্যক্তির নিকট যাকাত ফেৎরা ওয়াজিব হওয়ার পরিমাণ অর্থ সম্পদ নেই।
  2. মিসকিন অর্থাৎ,যারা সম্পূর্ণ রিক্ত হস্ত অথবা যে সকল ব্যক্তির জীবিকা অর্জনের ক্ষমতা নেই।
  3. ইসলামী রাষ্ট্র সমূহ হলে সে রাষ্ট্রের যাকাত তহবিলের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তি বর্গগণ।
  4. যাদের উপর ঋণের বোঝা চেপেছে।
  5. যারা আল্লাহর রাস্তায় শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদে লিপ্ত থাকে।
  6. মুসাফির ব্যক্তি যদিও সে সম্পদশালী হয় তবে সফরে রিক্ত হস্ত হয়ে পড়লে।
  7. যাকাত দাতার ভাই বোন,ভাতিজা ভাতিজি, ভগ্নিপতি, ভাগনা ভাগ্নি, চাচা চাচি,খালা খালু, ফোপা ফুপি,মামা-মামী, শাশুড়ি,জামাই,সৎ বাপ ও সৎ মা ইত্যাদি যদি গরীব হয়ে থাকে।
  8. নিজের গরিব চাকর বা কর্মচারীকে দেয়া যায়। তবে এটা বেতন বাবদ কর্তন করা যাবে না।

যাকাত আদায় করার তরিকা ও মাসায়েল

  • বছর সম্পূর্ণ হলে সাথে সাথেই যাকাত আদায় করতে হবে।বিনা ওজরে যদি কেউ বিলম্ব করে তাহলে পাপ হবে।যখন যাকাত আদায় করা হয় তখন নিয়ত করতে হবে যে,এই সম্পদ আল্লাহর ওয়াস্তে যাকাত হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে,নতুবা যাকাতের মাসআলার নিয়ম অনুযায়ী আদায় করা হবে না।
  • নেছাবের মালিক হওয়ার পর বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেও অর্থাৎ যাকাত ফরজ হওয়ার পূর্বেও অগ্রিম যাকাতপ্রদান করা যায়।
  • যাকাত প্রদানের সময় গ্রহণকারীকে একথা জানানো প্রয়োজন নেই যে,উক্ত অর্থ যাকাতের টাকা। আপন জনকে যাকাত দিলে তাকে একথা না বলাই শ্রেয়, কেননা বললে তার খারাপ লাগতে পারে।
  • যে পরিমাণ টাকা থাকলে কোন ব্যক্তির উপর যাকাত ফরজ হয়-এত পরিমান যাকাতের টাকা একজনকে দেয়া মাকরুহ। তবে ঋণী ব্যক্তির ঋণ মুক্তির জন্য বা অধিক সন্তান-সন্ততিওয়ালা কে এত পরিমাণ দিলেও ক্ষতি নেই।
  • যাকাত দেয়ার নিয়াতে কোন টাকা পৃথক করে রাখা হলে পরে দেয়ার সময় যাকাতের নিয়তের কথা মনে না আসলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
  • যে ব্যক্তিকে যাকাত দিবে অন্তত এত পরিমান দিবে যেন ওই দিনের খরচের জন্য সে আর অন্যের মুখাপেক্ষী না হয়। কমপক্ষে এত পরিমান দেওয়া মুস্তাহাব,এর চেয়ে কম দিলেও যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
  • কারো নিকট টাকা পাওনা থাকলে যাকাতের নিয়তে সেই পাওনা মাফ করে দিলে যাকাত আদায় করা হবে না বরং তার নিকট যাকাতের টাকা দিয়ে পরে তার নিকট থেকে ঋণ পরিশোধ বাবদ যে টাকা নিয়ে নিলে যাকাতও আদায় হবে ঋণও উসুল হবে্।
  • যাকাতের টাকা নিজের হাতে গরিবদেরকে না দিয়ে অন্য কাউকে উকিল বানিয়ে ওই ব্যক্তির দ্বারা দিলেও যাকাত আদায় হবে।
  • যাকাত ফরজ হওয়ার পর যদি নিজের সমস্ত মাল দান করে দিলে তার যাকাত মাপ হয়ে যায়।
  • যাকাত যে ব্যক্তি দান করবে সে ব্যক্তির অনুমতি ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে যাকাত দিয়ে দিলে উক্ত যাকাত দাতার আদায় হবে না।
  • যাকাত দাতা কাউকে পুরস্কার বা ঋণের নামে কিছু দিলে আর অন্তরে নিয়ত করলো যে যাকাত হতে দিলাম, তবুও যাকাত আদায় হয়ে যাবে। মুখে যাকাত কথাটা বলার আবশ্যকতা নেই।

লেখক এর মতামত

যাকাত দেওয়া যাদের উপর ফরজ তাদের কে যাকাত দিতে হবে।যাকাত যদি না দেয় তাহলে মৃত্যুর পর যাকাত না দেওয়ার জন্য 'আল্লাহ' তায়ালার কাছে জবাব দিতে হবে।যাকাত কি?যাকাত দেওয়ার নিয়মি এবং বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় এ গুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।এই পোষ্টটি আপনারা যারা যাকাত সর্ম্পকে জানেন না তাদের জন্য অনেক উপকারে আসবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url