বাংলা ছোট গল্প অনলাইন ।।বাদল দিনের কথা

শব্দ গুলো ভাবতে গেলে সাধারণত মানুষের চিন্তায় আসে ঘন মেঘে আছন্ন হওয়া একটা আকাশ,আর প্রকৃতির কোলে অবারিত বর্ষণ হওয়া একটা দিন।ধূলো জমে থাকা প্রকৃতির একটু রং পরিবর্তন,জনমানব শূন্য থাকে পথ-ঘাট।প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে মানুষেরা ফিরে ঘরে আর পাখিরা ফিরে নীড়ে।মেঘের গর্জন ঝড়ো হওয়ায় কারোর আবার খড়কুটো দিয়ে তৈরি করা ঘর ভাঙ্গার ভয়।তবে কি এসব মিলেই "বাদল দিনের কথা "মনে হয়? 

বাংলা-ছোট-গল্প-অনলাইন

বাদল দিনের বিষণ্ণময় আকাশ যখন মন খারাপ করে গুমোট বেধে থাকে তখন আকাশটা খানিক পুরোনো বলেই মনে হয়।কি কে জানে কার কথা,  প্রকৃতির সব মন খারাপ গিয়ে ঐ আকাশের বুকে কালো মেঘ হয়ে জড়ো হয়। তাই বলে হয়তো লেখকের লেখনীতে বাদল দিনের আকাশ নিয়ে প্রশ্ন হয় "আচ্ছা মেঘ,আকাশ কি কখনও পুরোনো হয়?"  

গুমোট বেধে থাকা আকাশ থেকে মন খারাপেরা যখন একে একে বর্ষণমুখর দিন হয়ে নেমে আসে প্রকৃতির বুকে তখন ভিজে চুপসে থাকে প্রকৃতি।স্নিগ্ধ,সতেজ আর প্রাণবন্তর দেখায় চারপাশ।এটাই হয়তো সৃষ্টির আসল লীলাখেলা। 

আরো পড়ুন : অনলাইনে টাকা ইনকাম করার সহজ উপায়

স্থানবেধে বাদলের দিন গুলোকে মানুষ  উপভোগ করে আলাদা আলাদা রকমে।গ্রাম বাংলার মানুষ বৃষ্টিকে উপভোগ করে টিনের চালের বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দ শুনে কাঁথা জড়িয়ে শুয়ে থেকে,কেউ বা আবার খোলা  জানালার পাশে বসে আশেপাশের পুকুর,ডোবা কিংবা উঠনে জমে থাকা জলের উপর জল থৈথৈ সেই নিদারুণ সৌন্দর্যকে  উপভোগ করে।

গ্রামীণ মানুষের ভাবনায় বাদলের এই দিন গুলো হয় একটু আমেজ পূর্ণময়।বাদলের দিনগুলোতে তাদের জীবন যখন বাড়ির ভেতরে আবদ্ধ হয়ে যায়,তখন এই মানুষেরাই জীবনকে আরেটু আলাদা ভাবে উপভোগ করতে ভিন্ন কিছু আয়োজনে মেতে উঠে।উনুনে আগুন জ্বালিয়ে মাটির হাঁড়িতে ভাঙা হয় শুকনো সব খাবার।এটি গ্রামীণ মানুষদের জীবনে চলে আসা এক ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। 

সৌন্দর্যের আরেক নাম হলো ফুল।প্রকৃতিতে ফুটে উঠা এই ফুলগুলো সব সময় চেষ্টা করে তাদের সর্বস্ব দিয়ে আপন মনে প্রকৃতিতে সাজিয়ে রাখে।ফুলের সুরভীতে দিয়ে মৌ মৌ করে রাখে প্রকৃতির আনাচে কানাচে।  ঠিক তেমনি বাদল দিনের জনপ্রিয় একটি ফুল হলো কদম ফুল।

আরো পড়ুন : ইউটিউবে ভিডিও দিয়ে অনলাইনে ইনকাম করার উপায় যেনেনিন

পুরো বর্ষা জুড়ে  বিরাজ করে কদম ফুলের সুভাস।লেখকের লেখনীতে এটি "বাদল দিনের কদম ফুল" নামে অধিক পরিচিত।শহরের লোকালয়ে এ ফুলের তেমন দেখা মিলে না।তাই তো প্রকৃতিতে যখন বর্ষা আসে তখন কদমের কথায় প্রকৃতির টানে বাংলার কবিরা শহরে ছেড়ে ছুটে যায় গ্রাম বাংলায়।

শহরের লোকালয়ে বাদলের দিন গুলোকে উপভোগ করা হয় কিছুটা যান্ত্রিক আর শহরের আধুনিকতায়। এখানে গ্রাম বাংলার চলে আসা ঐতিহ্যের মতোই শহরের মানুষদের ঘরে ঘরে আয়োজন করা হয় মাটির হাঁড়িতে ভাঙা শুকনো খাবারের পরিবর্তে ভূনা- খিচুড়ি আর পদ্মার ইলিশের ভাজা।

এখানকার মানুষের জীবন হয় ইট পাথর দিয়ে তৈরি করা ছোট বড়ো দালানের মাঝে আবদ্ধতায়।তাই এখানে এসে আর গ্রামীণ জীবনের টিনের চালের বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দ শুনা হয়না।কিংবা জানালার পাশে বসে পুকুর,ডোবা আর উঠনে এসে জমে থাকা জলের থৈথৈ শব্দের নিদারুণ দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ হয়না। 

আরো পড়ুন : ডাটা এন্ট্রি জবস অনলাইন বাংলাদেশ

এখানে বাদলের বর্ষণমুখর দিন গুলোকে কেউ উপভোগ করে ছাদে উঠে নিজেকে হারায় অবারিত ঝরে পড়া বারিধারার মাঝে।কেউ চা হাতে বেলকনিতে বসে বসে শুধু বৃষ্টি দেখে।কেউবা আবার নিজেকে হারায় বাদল দিনের গানের কথায়। কোথাও আবার চলার পথে প্রেমিক তার প্রেমিকার হাত ধরে  একসাথে বৃষ্টিকে উপভোগ করবে বলে  বৃষ্টি বিলাস করে। 

 হয়তো গ্রামীণ মানুষদের মতো করে নয় কিন্তু শহুরের জীবনে মানুষ বৃষ্টিকে উপভোগ করে নিজেদের মতো করে বাদলের দিনগুলোকে।তাই অবারিত বরষায় মন খারাপের মানুষদের জন্য আমার এই ছোট্ট এক বাণী:

"এই বরষায় কোনো মেঘ যেন না জমুক,
কোনো বৃষ্টি যেন না ঝরুক।
কোন গোপনে মন খারাপের বিষন্নতায়,
আর কারোর মন যেন না কাঁদুক। "
©-উদ্দীপ্ত

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url