জরিপ কি জরিপ কত প্রকার ও কি কি

আমাদের দেশে ভিবিন্ন সময় ভিবিন্ন জরিপ হয়েছে।আজকে আমি আপনাদের সাথে কয়েক টি জরিপ পরিচয় করিয়ে দিব।জরিপ কেন করা হয় ভিবিন্ন সময়ের জরিপের সাল নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।

ভূমি জরিপ

পোস্টসূচীপত্র:জরিপ অনেক গুরুত্ত পূর্ন একটি বিষয় আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো ভিবিন্ন জরিপ নিয়ে।

দিয়ারা জরিপ কি?

দিয়ারা জরিপ বলতে নদীর তীরবর্তী জমির জরিপকে বোঝায়।নদী তীরবর্তী কোন নতুন চর দেখা দিলে তা জরিপ করে নকশা ও খতিয়ান প্রণয়নের জন্য দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিসার দিয়ারা জরিপের কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকেন। 

আরো পড়ুন :  সাফ কবলা দলিলের খরচ

ভূমিহীনদের পুনর্বাসন এবং খাস জমি বন্টনকরন,খাস জমি উদ্ধারকরন, চরাঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং চর এলাকায় ভূমি সংক্রান্ত মামলা মোকদ্দমা হ্রাসকরন, সংক্ষিপ্ত সময়ে নকশা ও খতিয়ান প্রণয়ন করা দিয়ারা জরিপের প্রধান উদ্দেশ্য।

দিয়ারা জরিপ পি-৭০ শীটে সরেজমিনে প্রতিটি ভূমি খন্ড জরিপ করে এর আয়তন, পরিমাণ ও সীমানাসহ মৌজা নকশা ও স্বত্বলিপি প্রণয়ন করা হয়।১৯৬৩ সনে ঢাকাতে দিয়ারা সেটেলমেন্ট নামে স্থায়ী সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন করা হয় এবং পালাক্রমে ফরিদপুর, বরিশাল, কুষ্টিয়া, পাবনা,রংপুর, বগুড়া,পটুয়াখালী, খুলনা, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে দিয়ারা জরিপ পরিচালিত হয়।

১৯৫০ সনের জমিদারী অধিগ্রহণ প্রজাস্বত্ব আইনের ৮৬ ও ৮৭ ধারা মতে নদী ভাঙ্গনে সৃষ্ট সিকস্তি ভূমি ও পয়স্থি ভূমি জরিপ করে নকশা ও খতিয়ান প্রণয়নের জন্য কালেক্টর অফিস থেকে ভূমি জরিপ অধিদপ্তর চাহিদা পত্র প্রেরণ করা হয়। এর চাহিদা পত্রের ভিত্তিতে দিয়ারা সেটেলমেন্ট অফিস দিয়ারা কার্যক্রম গ্রহণ করে।

সিলেটে জরিপ কি?

১৯৩৬ সনের সিলেট প্রজাস্বত্ব আইনের ১১৭ ধারার বিধান মতে সিলেটে ১৯৫০ সনে প্রজ্ঞাপন জারি করে সর্বপ্রথম ক্যাডাষ্ট্রাল জরিপের কার্যক্রম শুরু হয়।এ জরিপ কার্যক্রমে ১৯৫৬ সনের আরও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে এ জরিপ কার্যক্রমকে 

১৯৫ সনের জমিদারী অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের অধীনে চালুকৃত এস. এ জরিপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।একমাত্র সিলেটেই এস. এ জরিপটি ক্যাডাষ্ট্রাল জরিপের আদলে পরিচালিত হয়। এ কারণে সিলেট সি. এস ও এস. এ খতিয়ান ও নকশা মূলত একই ধরনের।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জরিপ কি?

 পার্বত্য আদিবাসীদের ভূমির জন্য নকশা ও খতিয়ান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৮৪ সনে ভুমি খতিয়ান (পার্বত্য চট্টগ্রাম) অধ্যাদেশ জারি করা হয়।সরকার ১৯৮৪ সনে পার্বত্য চট্টগ্রামে নকশা ও খতিয়ান প্রস্তুত করার জন্য সরেজমিনে কার্যক্রম শুরু করিলে উপ-জাতীয় লোকজন জরিপ কাজে উৎসাহী হতে পারেন নাই।

 তাছাড়া ১৯৮৬ শুনে শান্তি বাহিনী কর্তৃক কয়েকজন জরিপ কর্মচারী রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী থানার বেতবুনিয়া মৌজার কর্মরত অবস্থায় অপহৃত হওয়ার দরুন জরিপ কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে।জরিপ কার্যক্রমের প্রতি উপ-জাতিদের ভুল ধারণা,বিরোধিতা, উপ-জাতীয় অসন্তোষ 

এর দরুন ভূমি মন্ত্রণালয়ের ২২-১০-৮৮ ইং তারিখের ২-১৩১/৮৪/৪৯৪ নংস্মারকের নির্দেশনা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম জরিপ কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়।পার্বত্য চট্টগ্রাম রেগুলেশন ১৯০০ মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার ভূমি ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়।

জোনাল জরিপ কি?

ভূমি সংস্কার কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ১৯৮৪ সালের ২৪ ডিসেম্বর তারিখে সারা দেশব্যাপী ১৯৮৫-৮৬ সাল হতে স্থায়ী জোনাল সেটেলমেন্ট অফিস স্থাপন এবং প্রতিটি বৃহত্তর জেলায় ২৮ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী এবং 

আরো পড়ুন : হেবা দলিলের খরচ

প্রতিটি উপজেলায় ১৯ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী সমন্বয়ে স্থায়ী জরিপ কাঠামোর আওতায় ক্রমান্বয়ে অফিস স্থাপন করে কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।প্রধান অনুযায়ী তদানুযায়ী প্রথমে ১০টি বৃহত্তর জেলার মোট ২০৯টি উপজেলায় জরিপ কাজ আরম্ভ করা হয়।

জোনাল জরিপের তথ্যাদি নিম্নরূপ

এলাকার নাম-আরম্ভের বছর-এ পর্যন্ত অগ্রগতি
বৃহত্তর যশোর অঞ্চল-১৯৮৫-৮৬- চলমান রয়েছে
বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চল-১৯৮৫-৮৬-চলমান রয়েছে
বৃহত্তর কুমিল্লা অঞ্চল-১৯৮৫-৮৬-চলমান রয়েছে
বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল-১৯৮৬-৮৭-চলমান রয়েছে
বৃহত্তর টাঙ্গাইল অঞ্চল-১৯৮৬-৮৭-চলমান রয়েছে
বৃহত্তর খুলনা অঞ্চল-১৯৮৬-৮৭-চলমান রয়েছে
বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চল-১৯৮৭-৮৮-চলমান রয়েছে
বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চল-১৯৮৭-৮৮-চলমান রয়েছে
বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল-১৯৮৭-৮৮-চলমান রয়েছে

ঢাকা সিটি জরিপ/মহানগর জরিপ কি?

ঢাকা মহানগরীর নিচু জমি ভরাটপূর্বক ভুমির শ্রেণী পরিবর্তিত হইয়া ভূ-পৃষ্ঠের ব্যাপক পরিবর্তনের ফলে উক্ত এলাকার নকশা ও ও খতিয়ান দ্রুত প্রস্তুত করার জন্য ৯৫-৯৬ অর্থবছরে প্রকল্প জরিপ শুরু হয়। ঢাকা মহানগরীর ১৯১ টি মৌজার নকশা ও খতিয়ান চূড়ান্তরূপে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়েছে। 

তবে কিছু মৌজার কিছু নকশা ও খতিয়ান এখনো চূড়ান্ত রূপে প্রকাশনার অপেক্ষাধীন রয়েছে। উক্ত জরিপে কিছু মৌজাকে বিভক্ত করা হয়েছে।উক্ত জরিপে প্রচলিত আইন বিধিকে যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয় নাই। কারণ আর. এস জরিপ এর কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পূর্বেই অত্র জরিপ পরিচালিত হওয়ায় নকশা ও খতিয়ানে ত্রুটি বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হয় যা সমাধান করিতে দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।

পেটি জরিপ কি?

কিছু মৌজা বিচ্ছিন্নভাবে জরিপ করার প্রয়োজন হয়।তখন জেলা প্রশাসককে সেটেলমেন্ট অফিসারের দায়িত্ব ও ক্ষমতা দেয়া হয়।ক্ষুদ্র এলাকার এই জরিপকে পেটি সেটেলমেন্ট জরিপ বলা হয়।

নদী জরিপ কি?

২০০২-২০০৩ অর্থবছরে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ,মুন্সিগঞ্জ জেলার নদী সংলগ্ন ২৭১ টি মৌজার জরিপ কার্যক্রম গত ২০০২-০৩ অর্থবছরে শুরু করা হয়।পরবর্তীতে নদীর অরিজিনাল টেরিটোরি নির্ধারণ বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে ৩৫০৩/২০০৯ নং রীট পিটিশন দায়ের হওয়ায় অক্টোবর, ২০০৯ হতে এ জরিপের সকল কার্যক্রম স্থগিত রাখা হয়েছে।

সাভার জরিপ কি?

২০০৫-০৬ অর্থবছর হতে সাভার উপজেলাধীন ১৭৯ টি মৌজার জরিপ কাজ শুরু হয়।এর মধ্যে ১০৭ টি মৌজার কার্যক্রম চলমান আছে।৭২ টি মৌজার ট্রার্ভার্স সম্পন্ন না হওয়ায় পরবর্তী স্তরের কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।১০৫টি মৌজার মধ্যে ১০১ টি মৌজার চূড়ান্ত যাঁচ সম্পন্ন হয়েছে।বাকী ৪টি মৌজ আপীল স্তরে উন্নীত হয়েছে।

লেখক এর মতামত

আমি (শামিম মোক্তার) শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক শ্রীপুর,গাজিপুর।ভিবিন্ন প্রকার জরিপ নিয়ে যদি আপনাদে কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url