মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন

মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন সর্ম্পকে আদের সকলের জানা প্রয়োজন।মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন যদি আমাদের জানা থাকে তাহলে ওয়ারিশদের সাথে কেও প্রতারনা করতে পারবেন না এবং জায়গা জমি নিয়ে জটিলতা থাকবে না।

মুসলিম উত্তরাধিকার

পোস্টসূচীপত্র:মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন নিয়ে আরোচনা করবো কোরান এবং হাদিস থেকে অরোচনা হবে,মুসলিম ফারায়েজ অনুযাই কে কতটুকু সম্পত্তি পাবে।

ফারায়েজ শব্দের অর্থ

সম্পত্তির উত্তরাধিকার আইনের নাম ফরায়েজ সম্পত্তি বন্টন নির্ধারণকে বা বিদ্যাকেও ফারায়েজ বলা যেতে পারেশরীয়তের পরিভাষায় ইসলামী মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের জ্ঞানকে ইলমুল ফারায়েজ বলা হয়।উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামী আইনের অবদান বৈপ্লবিক

আরো পড়ুন : বৈ মাত্রেয় বোনের সম্পত্তি কে কতটুকু পাবে

রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর বাণী

১।ফারায়েজের জ্ঞান, জ্ঞান জগতের অর্ধাংশ তুল্য (আল হাদিস)।২।তোমরা ফারায়েজের বিদ্যা শিক্ষা কর, এটা হচ্ছে জ্ঞান জগতের অর্ধাংশ তুল্য। এই বিদ্যাই আমার উম্মত থেকে সর্বপ্রথম লোপ পেতে শুরু করবে। (আল হাদিস)।

মুসলিম ফারায়েজের উৎসঃ

ইসলামী আইনের উৎস যেমন কুরআন,হাদিস,ইজমা ও কিয়াস তেমনি মুসলিম ফারায়েজের আইন এর উৎস ও উহাই দেখুন-আল-কোরআনের সূরা নিসা ঃআয়াত- ৭, ১১, ১২, ও ১৭৬

মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তি বন্টনের পূর্বে লক্ষণীয় বা বিবেচ্য বিষয়ঃ

মৃত ব্যক্তির স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বন্টনের পূর্বে তার কাফন-দাফনের ব্যয় ঋণ,অসিয়ত,দান ইত্যাদি থেকে থাকলে তাহলে সর্বপ্রথম উহা বিবেচনায় এনে অবশিষ্ট স্থাবর-অবস্থাবর সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে মিরাস (প্রাপ্য অংশ) অনুযায়ী বন্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।

যে সকল উত্তরাধিকারী কখনও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয় না

১।পিতা
২।মাতা
৩।স্বামী
৪।স্ত্রী
৫।পুত্র ও
৬।কন্যা

উপরোক্ত ছয় ব্যক্তির মধ্যে স্বামী বা স্ত্রী যেকোনো একজন মৃত থাকে তবে অবশিষ্ট ৫ জন কখনও উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে না।

উত্তরাধিকারীদের শ্রেণী বিভাগ

মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীগণ তিন শ্রেণীতে বিভক্তঃ
১।যুবুল ফুরুযঃ
এর অর্থ হল প্রথম শ্রেণীর উত্তরাধিকারী বা জুল কুরআন বা কোরআনীক অংশীদার অর্থাৎ এদের প্রাপ্য অংশ কুরআন-হাদীস দ্বারা নির্ধারিত,সম্পদ,বন্টনের এদের দাবী অগ্রগণ্য।তবে তাদের এই প্রাপ্তি নিঃশর্ত নয় কতিপয় ক্ষেত্রে এদেরকে অবশিষ্টভোগী হিসাবেও সম্পত্তি ভোগ করতে দেখা যায়।তবে এরা যদি অংশীদার হিসাবে হিস্যা লাভ করে,তবে অবশ্যই কোরানে নির্ধারিত অংশই পাবে।

আরো পড়ুন : দাদার দাদীর নানীর সম্পত্তি কে কতটুকু পাবে

আর না পাইলে না।তবে যবুল ফুরুযগণ প্রথম সুযোগেই একত্রে সবাই হিস্যা/অংশ ভোগ করবে তাও নয়।তারা যখন যে অবস্থায় সম্পত্তি পাবে তখন কুরআন নির্ধারিত অংশ পাবে একথা ঠিক।যার কারণেই তাদেরকে কোরআনিক অংশীদার বলা হয়েছে।যুবুল ফুরুযদের অংশ কোরআন থেকে নির্ধারিত হওয়ার সম্মানে তাদেরকে প্রথম শ্রেণীর উত্তরাধিকারীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

পূর্বেই বলা হয়েছে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষ প্রাপ্য হিস্যা/অংশ কার্যকরী হয়।কখনোও অবস্থার প্রেক্ষাপটে এরা বাদও পরে যায়।যেমন মৃত ব্যক্তির ছেলে সন্তান থাকলে যুবুল ফুরুযদের অনেকেই প্রাপ্তি থেকে বাদ পড়ে।তবে যারা কখনও উত্তরাধিকারী থেকে বঞ্চিত হয় না তাদের আলাদা তালিকা রয়েছে।

যা ইতোমধ্যে আলোচনা করা হয়েছে।এই ধারণা করা ঠিক নয়,যুবুল ফুরুযরা সর্বদাই সর্বাগ্রে এবং একত্রে সম্পত্তির দাবিদার হবে।এখানে যুবুল ফুরুয বা প্রথম শ্রেণীর উত্তরাধিকারী এই অর্থে যে তাদের শেয়ার/

হিস্যা স্বয়ং কোরআন নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।এখানে হিস্যা/অংশ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে মাত্র।কিন্তু প্রাপ্তির বিষয়টি নিঃশর্ত করা হয়নি।যুবুল ফুরুয মোট ১২ জন।পুরুষদের মধ্যে ৪ জন এবং মহিলাদের মধ্যে অবশিষ্ট ৮ জন।

পুরুষদের মধ্যে ৪ জন যথাঃ

১।পিতা
২।পিতার পিতা (দাদা)
৩।স্বামী
৪।বৈপিত্রীয় ভাই।

মহিলাদের মধ্যে ৮ জন যথাঃ

১।স্ত্রী
২।মাতা
৩।কন্যা
৪।সহোদার বোন
৫।পুত্রের কন্যা
৬।বৈপিএীয় বোন
৭।বৈমাত্র্রীয় বোন
৮।জ্যাদ্দা সহীহ অর্থাৎ দাদী ও নানী।

অংশীদারদের তালিকাঃ

(ক)বিবাহের সম্পর্কে আত্মীয়
১।স্বামী
২।স্ত্রী
(খ)রক্তের সম্পর্কে আত্মীয়
৩।পিতা
৪।সত্যিকার পিতামহ
৫।মাতা
৬।সত্যিকারের মাতামহী
৭।কন্যা
৮।পুত্রের কন্যা
৯।আপন বোন
১০।বৈমাত্রীয় বোন
১১।বৈপিএীয় বোন
১২।বৈপিএীয় ভাই

(২)আসাবা (Residuary):

এর অর্থ হল অবশিষ্টভোগী বা দ্বিতীয় শ্রেণীর উত্তরাধিকারী।বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন এর অংশীদার হয় বিধায় এদের প্রাপ্য অংশ নির্দিষ্ট না থেকে একেক সময় একেক রকম হয়।প্রথম শ্রেণীর উত্তরাধিকারীদের অবর্তমানে বা বর্তমান থাকলেও তারা যখন প্রাপক না হয় তখন আসাবারাই সম্পত্তির মালিক হয়।আসবাবগণ কখনও কোন নির্দিষ্ট অংশের দাবিদার নয়।আসাবা স্থরে গিয়ে সম্পত্তি বন্টনের নিষ্পত্তি ঘটে।

আরো পড়ুন : স্বামীর স্ত্রীর সম্পত্তি কে কতটুকু পাবে

অবশিষ্টভোগীদের তালিকা

(ক)উত্তম পুরুষ
১।পুত্র
২।কন্যা (পুত্রের বর্তমানে)
৩।পুত্রের পুত্র
৪।পুত্রের কন্যা (পুত্রের পুত্রের বর্তমানে)
(খ)পূর্ব পুরুষ
৫।পিতা
৬।সত্যিকার পিতামহ
(গ)পিতার বংশধরগণ
৭।আপন ভাই
৮।আপন বোন (আপন ভাইয়ের বর্তমানে)
৯।বৈমাত্রীয় ভাই
১০।বৈমাত্রীয় বোন (বৈমাত্রীয় ভাইয়ের বর্তমানে)
১১।আপন ভাইয়ের পুত্র
১২।বৈমাত্রীয় ভাইয়ের পত্র
১৩।আপন ভাইয়ের পুত্রের পত্র
১৪।বৈমাত্রীয় ভাইয়ের পুত্রের পত্র
(ঘ)দাদার বংশধরগণ
১৫।আপন চাচা
১৬।বৈমাত্রীয় চাচা
১৭।আপন চাচার পুত্র
১৮।বৈমাত্রীয় চাচার পুত্র
১৯।আপন চাচার পুত্রের পুত্র
২০।বৈমাত্রীয় চাচার পুত্রের পুত্র

(৩)যুবুল আরহামঃ

এরা হলো দু-সম্পর্কীয় আত্মীয় বা দূরবর্তী অংশীদার বা তৃতীয় শ্রেণীর উত্তরাধিকারীগণ।মৃত ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কোন ওয়ারিশ যখন না থাকবে কেবল তখনই এরা উত্তরাধিকারী হবে।

দূরবর্তী আত্মীয়দের তালিকাঃ
(ক) উত্তর পুরুষ (প্রথম শ্রেণী)
১।কন্যার সন্তান ও তাদের বংশধরগণ
২।পুত্রের কন্যার সন্তান ও তাদের বংশধরগণ
(খ) পূর্বপুরুষ (দ্বিতীয় শ্রেণী)
৩।মিথ্যা পিতামহগণ (যত উর্ধ্বের হউক)
৪।মিথ্যা মাতামহীগণ (যত উর্ধ্বের হউক)
(গ)পিতা মাতার বংশধরগণ (তৃতীয় শ্রেণি)
৫।আপন ভাইয়ের কন্যা
৬।বৈমাত্রীয় ভাইয়ের কন্যা
৭।আপন বোনের কন্যা
৮।বৈমাত্রীয় বোনের পুত্র/কন্যা
৯।বৈপিত্রিয় ভাইয়ের পত্র/কন্যা
১০।বৈপিত্রিয় বোনের পুত্র/কন্যা
(ঘ) দাদা নানার বংশধর গণ (চতুর্থ শ্রেণী)
১১।আপন ফুফু
১২।বৈমাত্রীয় ফুফু
১৩।বৈপিত্রিয় ফুফু
১৪।বৈপিত্রিয় চাচা
১৫।আপন মামা
১৬।আপন খালা
১৭।বৈমাত্রীয় মামা
১৮।বৈমাত্রীয় খালা
১৯।বৈমাত্রীয় মামা
২০।বৈপিত্রিয়

লেখক এর মতামত

আমি (শামিম মোক্তার)  শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক শ্রীপুর,গাজিপুর।মুসলিম আইনে সম্পত্তির বন্টন নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url