অগ্র ত্রুয় Pre emption কি
আজকে আমি আপনাদের সাথে আরোচনা করবো অগ্র ত্রুয় বা Pre emption নিয়ে।অগ্র ত্রুয় কি অগ্র ত্রুয় কেন করা হয় এবং অগ্র ত্রুয় কখন করা হয়।
Pre emption নিয়ে সকলের জানা থাকা প্রয়োজন জায়গা জমি কিনতে গেলে Pre emption কেন করা হয় যদি আপনাদের ধারনা না থঅকে তাহলে জমি কিনে জটি লতাই পরতে পারেন।
অগ্র ত্রুয় এর সংঙ্গা
“অগ্র-ক্রয়”( Pre-emption) বা “শুফা” শব্দটি শাব্দিক ও আভিধানিক অর্থ “সংযোজন,”কিন্তু আইনে এর দ্বারা অগ্রক্রয় অধিকারকে বোঝায়।অর্থাৎ অগ্রক্রয়াধিকার হলো সেই অধিকার যার বলে কোন স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় হয়ে গেলে ঐ জমির সহ-অংশীদার কিংবা ঐ জমি সংলগ্ন অপর একটি স্থাবর সম্পত্তির মালিক ক্রেতার নিকট হতে এটি একই মূল্যে ক্রয় করতে পারেন।
সুতরাং অগ্রক্রয় হলো এমন একটি অধিকার,যা কোন স্থাবর সম্পত্তির মালিক,যা তার নিজের নয়,এমন অন্য কোন স্থাবর সম্পত্তির ক্রেতার স্থলবর্তী হয়ে এইরূপ শর্তাদী সাপেক্ষে লাভ করার অধিকার রাখেন,যেগুলি এ স্থাবর সম্পত্তির শান্তিপূর্ণ ভোগ দখলের জন্য প্রয়োজন।
আরো পড়ুন : Mutation বা নামজারি খতিয়ান কি
উদাহরণঃ-বসির এক খন্ড জমির মালিক।আবার বজলুও এখনো জমির মালিক।বসির তার জমিখানী ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকায় রহমানের নিকট বিক্রয় করল।এক্ষেত্রে রহমানের ক্রয় সম্পূর্ণ রূপে বৈধ কিন্তু বজলু যদি বশিরের সহ অংশীদার হয় এবং জমি যদি পাশাপাশি হয় এবং বশিরের জমি রহমানের নিকট বিক্রয় করতে যদি বজলুর অসুবিধা হয়,
তাহলে মুসলিম আইন অনুসারে বজলু রহমানের খরিদা জমিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে।অর্থাৎ বশির রহমানের নিকট জমিটি যে মূল্যে বিক্রয় করেছে সে মূল্য রহমানকে পরিশোধ করে এই জমিতে তার মালিকানা অর্জন করতে পারবে।এখানে রহমান প্রথম ক্রেতা হলেও বজলু তার পূর্ববর্তী ক্রেতার স্থান দখল করবে।এই অধিকারের নীতিকে অগ্রক্রয়ের অধিকার বলা হয়।
অগ্র-ক্রয় অধিকারের প্রকৃতি
বিক্রয় মূল্য দিয়ে ক্রেতার নিকট থেকে সম্পতি ক্রয় করার অধিকার কে অগ্রক্রয় অধিকার বলা হয়।ইসলামী আইন এই অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে।অগ্রক্রয় শব্দের পরিভাষা শুফা।পূর্ণ এবং সিদ্ধ বিক্রয়ের উপরের শুফার অধিকার বলবত হয়।যে হস্তান্তর নয় তার উপর শুফার প্রয়োগ নেই।
হেবার ক্ষেত্রে শুফা প্রযোজ্য হয় না।হেবা-বিল-এওয়াজ এর ক্ষেত্রে শুফার অধিকার প্রয়োগ করা যায়,কারণ সব দিক দিয়ে বিবেচনা করলে হিবা-বিল-এওয়াজকে বিক্রয় বলা যায়।কোন কোন মালিকী আইন তত্ত্ববিদদের মতে লীজের ক্ষেত্রে শুফার অধিকার প্রযোজ্য হয়।শুধু বিক্রয়ের অভিপ্রায় দেখা দিলে শুফার অধিকার প্রয়োগ করা যায় না।বিক্রয় যখন যথার্থ সম্পন্ন হয় তখন শুফার অধিকারের উদ্ভব হয়।
এজমালী সম্পত্তির শরীফের অধিকারীর শুফার দাবি সর্বাগ্রে গণ্য।তারপর আসে সুখাধিকার ভিত্তিক স্বার্থযুক্ত ব্যক্তিগণের দাবি এবং সর্বশেষে আসে প্রতিবেশীগণ।একই শ্রেণীতে একাধিক শাফী ও শুফার দাবিদার থাকলে,তারা সকলে হানাফীদের মতে সমান অংশ পাবে।শাফেয়ী এবং হাম্বলীদের মতে অগ্রক্রয়ের অধিকার শরিকদের অংশ মোতাবেক হবে।তাদের মতে, একমাত্র শরীক ছাড়া অন্য কারও শুফার অধিকার নেই।
অগ্র-ক্রয় অধিকারের প্রয়োগ
“অগ্রক্রয়” আইনে বিভিন্ন কার্যবিধির প্রভাব কম নয়।কোন কোন ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন প্রথা দ্বারা বলবত হয়ে থাকে। বিচার বিবেচনা,ন্যায়পরতা ও বিবেকের প্রাধান্য দিয়ে বিভিন্ন আদালতে এটি কার্যকরী হয়ে থাকে।মাদ্রাজ এবং মালাবরে অগ্রক্রয় আইন বলবত নয়।
এই আইন বিহার,সিলেট,সুরাট,গন্ধ্রী,ব্রোচ এবং গুজরাটের কোন কোন অঞ্চলে প্রথা ব্যতিরেকে কার্যকর হয়ে থাকে। প্রথাগত দিক দিয়ে অগ্রক্রয় আইন বলবৎ করতে গেলেও অগ্রক্রয় কারীর ঐ স্থানের বাসিন্দা হওয়া বাঞ্ছনীয়।এইসব এলাকায় জমিজমা থাকলেও বাসিন্দা না হলে এই অধিকার প্রয়োগ করা যায় না।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ভিতর অগ্রক্রয় আইন প্রচলিত নয়।তবে প্রধা দ্বারা এর প্রয়োগ হতে পারে।কোন হিন্দু যদি কোন মুসলিম ব্যক্তির নিকট হতে জমি ক্রয় করার সময় বিক্রেতার সাথে যদি এমন চুক্তি করে যে,তার অংশীদারেরা অগ্রক্রয় করতে পারবে তাহলে এইরকম চুক্তি বৈধ হবে।
বিক্রেতা যদি সংশ্লিষ্ট অংশীদারদেরকে,তার জমি বিক্রয় করার কথা জানায় এবং তারা না নিলে এটি অন্যত্র বিক্রয় হয়ে গেলে এর অগ্রক্রয় চলবে না।আবার এমনও হতে পারে যে বাজারে ওই জমির যে দাম অংশীদারদের কেউ নিতে চাইলে বেশি দামে নিতে হয়,এমতাবস্থায় অন্যের কাছে এটি কম দামে বিক্রয় হলে অগ্রক্রয় বলবত হবে।
অগ্রক্রয় আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তিনটি পক্ষ থাকতে পারে।যথা- (ক) বিক্রেতা,(খ) ক্রেতা,এবং (গ)অগ্রক্রেতা। অগ্রক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতাকে যে মুসলমান হতে হবে এমন কোন বাধা ধরা নিয়ম নেই।এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় অনুসারে ক্রেতা যে কোন ধর্মের হলেও অগ্রক্রয় অধিকার অটুট থাকবে।
আরো পড়ুন : sa খতিয়ান কি?এস এ খতিয়ান ইতিহাস
তবে অগ্রক্রয় সংক্রান্ত কোনো প্রথা না থাকলে বিক্রেতা এবং ক্রেতা মুসলমান এবং অগ্রক্রেতা অমুসলমান হলে এই আইন প্রয়োগ হতে পারে না।কলিকাতা,বোম্বাই এবং এলাহাবাদ হাইকোর্টের অভিমতে বিক্রেতা এবং অগ্রক্রেতাকে মুসলমান হতে হবে।বিক্রেতা এবং অগ্রক্রেতা বিভিন্ন মাযহাবের অনুসারী হলে এই আইন নিম্নলিখিতভাবে প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
যথা-
(ক)বিক্রেতা এবং অগ্রক্রেতা সুন্নি কিংবা শিয়া হলে সুন্নি
বা শিয়া আইন বলবত হবে।
(খ)বিক্রেতা সুন্নি এবং অগ্রক্রেতা
শিয়া হলে শিয়া আইন প্রযোজ্য হয়ে থাকে।এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই
ক্ষেত্রে যুক্তি এই যে, অগ্রক্রেতা সুন্নি মুসলমান হিসাবে ঐ সম্পত্তি বিক্রয়
করতে চাইলে প্রতিবেশীর কাছে অর্থাৎ এই বিক্রেতার কাছে বিক্রয় করা তার
দায়িত্বও বটে।
অথচ অগ্রক্রয়ের জন্য ঐ ব্যক্তি তাকে ঐ সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করতে পারে।শিয়া আইন এই ক্ষেত্রে বলবত হতে থাকলে এই বিক্রেতার কাছে ঐ সম্পত্তি বিক্রয় করা তার জন্য কোন দায় হবে না।সে যেমন-তাকে এটি বঞ্চিত করতে পারে তেমনি এই ব্যক্তি ও তাকে বঞ্চিত করতে পারে। কারণ শিয়া আইনে প্রতিবেশীর ক্ষেত্রে অগ্রক্রয় আইন প্রয়োগ হয় না।
(গ)বিক্রেতা শিয়া এবং অগ্রক্রেতা সুন্নি হলে এই ক্ষেত্রেও এলাহাবাদ হাইকোর্টের মতে, শিয়া আইন কার্যকর হবে। কিন্তু কলিকাতা, হাইকোর্টের রায় অনুসারে এটি সুন্নী আইন মোতাবেক সম্পন্ন হবে। উল্লেখ করা যায় যে,কলিকাতা হাইকোর্টের মতে, বিক্রেতা এবং অগ্রক্রেতা উভয় শিয়া না হলে সেই ক্ষেত্রে সুন্নী আইন প্রযোজ্য হবে।
অগ্র-ক্রয়াধিকার নীতির প্রবর্তন
কোন স্থাবর সম্পত্তি বিক্রিত হলে এটি যে শর্তে বিক্রয় করা হয়েছে সেই সকল শর্ত মেনে নিয়ে কোন ব্যক্তি কর্তৃক ক্রেতার স্থলাভিষিক্ত হওয়ার যে অধিকার রয়েছে তাকে মুসলিম আইনে অগ্র-ক্রয়াধিকার বলে।“হক সাফা” অর্থ অগ্র-ক্রয়াধিকার।
আইনে এর অর্থ হচ্ছে বিক্রেতা যে মূল্যে বিক্রয় করেছে সেই মূল্যে বিক্রেতার সম্পত্তি ক্রয় করার অধিকার। তা হচ্ছে একটি অধিকার যার বলে একটি স্থাবর সম্পত্তির মালিক অপর একটি স্থাবর সম্পত্তি যা কারো কাছে বিক্রয় করা হয়েছে তা ক্রয়ের মাধ্যমে অর্জন করতে পারে।
দেওয়ানী কার্যধারায় হক সাফা-সংক্রান্ত আইন প্রয়োগ করা হয়,যদি বিক্রেতা ক্রেতা এবং হক সাফা দাবি কারী সকলেই মুসলমান হয়।
আরো পড়ুন : cs খতিয়ান কি?সি এস খতিয়ান চেনার উপায়
যদি সম্পত্তি কোন বেনামদারের নামে থাকে,তবে আসল মালিক তলবের আনুষ্ঠানিকতা পালন করতে পারেন এবং তারপর মামলা দায়ের করতে পারেন।যেমন-বশির একখণ্ড জমির মালিক।বজলুও এক খন্ড জমির মালিক।বশির তার সম্পত্তি ১০,০০০/-(দশ হাজার) টাকায় রহমান এর কাছে বিক্রয় করল।
এখানে রহমানের ক্রয় বৈধ কিন্তু বজলু যদি বশিরের সহ-অংশীদার এবং উভয়ের জমি যদি পাশাপাশি হয় এবং বশিরের জমি রহমানের কাছে বিক্রয় করলে যদি বজলুর অসুবিধা হয়,তাহলে মুসলিম আইন অনুসারে বজলুর রহমানের খরিদা জমিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারবে
অর্থাৎ বশির রহমানের কাছে জমি যে দামে বিক্রয় করেছে সে দাম রহমানকে বুঝিয়ে দিয়ে এই জমিতে তার মালিকানা অর্জন করতে পারবে।এখানে রহমান প্রথম ক্রেতা হলেও বজলু তার পূর্ববর্তী ক্রেতার স্থান দখল করবে। এই অধিকারের নীতি কে অগ্রক্রয়ের অধিকার বলা হয়।
কোন স্থাবর সম্পত্তি বিক্রি হয়ে গেলে অপর একটি স্থাবর সম্পত্তির মালিক ক্রেতার কাছ থেকে ঐ সম্পত্তি একই মূল্যে ক্রয় করে নিতে পারেন।এইভাবে স্থাবর সম্পত্তি ক্রয় করার অধিকারকে “শুফা” বলা হয়ে থাকে।ইংরেজি ভাষায় একে “প্রি-এমশন”( Pre-emption) বলা হয়।
বিচারপতি মাহমুদ বলেন,শুফা আইন মুসলিম আইন দর্শনের একটি মূল্যবান শাখা।এদেশের মুসলিম বিচারকগণ এ প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন।সকল সম্প্রদায়ের মানুষের উপর ছিল এর প্রয়োগ।শুফা মুসলিম আইনে বর্ণিত একটি অধিকার হলেও কোন কোন এলাকায় রেওয়াজের ভিত্তিতে তা হিন্দু সমাজেও প্রচলিত আছে।
বাংলাদেশের সিলেট জেলার হিন্দুগণ শুফা অধিকার স্বীকার করে থাকেন।সাধারণত:রেওয়াজী আইনকে আদালতে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে রেওয়াজ সম্পর্কে সুস্পষ্ট প্রমাণ দাখিল করতে হয়।কিন্তু যে ক্ষেত্রে রেওয়াজ সম্পর্কে সকলেই সাধারণভাবে অবহিত এবং আদালতেও স্বীকৃতি অর্জন করে সে ক্ষেত্রে তা আর নতুন করে প্রমাণ করার প্রয়োজন হয় না।
মুসলমানদের শুফা অধিকার হিন্দু-সমাজে চালু হওয়ার একটি ইতিহাস আছে।খোদ মুসলিম আইনে বলা হয়েছে যে, হিন্দুগণও এ অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।কিন্তু মুসলিম বাদশাহদের আমলে হিন্দুগণ কখনো প্রথমে এ অধিকার প্রয়োগ করতে অগ্রসর হয়নি।
প্রথমে মুসলমানগণ হিন্দুদের সম্পত্তির উপর এই অধিকার প্রয়োগ করেন এবং আইনে বিধান রয়েছে বলে আদালতের তা স্বীকৃত হয়।পরবর্তীকালে ক্রমে ক্রমে হিন্দুগণও মুসলমানদের সম্পত্তির উপর তা প্রয়োগ করতে থাকেন।মুসলিম শাসনের পূর্বে পাক-ভারত উপমহাদেশে শুফা অধিকারের অস্তিত্ব ছিল না।মুসলিম শাসন প্রবর্তিত হওয়ার পর যখন মুসলিম আইন চালু হয়,তখন থেকে শুফার অধিকারও এদেশে প্রচলিত হয়।
লেখক এর মতামত
আমি (শামিম মোক্তার) শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক শ্রীপুর গাজিপুর।অগ্র ত্রুয় বা Pre emption নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url