জনসাধারণের ব্যবহার্য জমি পরিত্যক্ত সম্পত্তি কি
জনসাধারণের ব্যবহার্য জমি কোন গুলো এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তি কি এগুলো নিয়ে আজকে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো।
সূচীপত্র:পরিত্যক্ত সম্পত্তি এবং জনসাধারণের ব্যবহার্য জমি আমদের সকলের জানা প্রয়োজন।জনসাধারণের ব্যবহার্য জমি কোন গুলো কেনা বেচা করা যাই কিনা।
পরিত্যক্ত সম্পত্তি কি?
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ বাংলাদেশের এলাকার অবস্থিত কোন সম্পত্তির মালিক/ব্যবস্থাপক উহার রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার কোনরূপ বন্দোবস্ত না করিয়া যদি বাংলাদেশ এলাকায় অনুপস্থিত থাকেন বা অন্য কোন দেশে চলিয়া গিয়ে থাকেন বা তাহাদের কোন হদিস না পাওয়া যায়
আরো পড়ুন : অর্পিত সম্পত্তি কি খাস জমি চেনার উপায়
তাহা হইলে উক্ত সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসাবে গণ্য হইবে এবং রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ১৬ নম্বর আদেশ মোতাবেক পরিত্যক্ত সম্পত্তি ব্যবস্থাপনার সুবিধার্থে এরূপ সম্পত্তি ব্যবহারের ভিত্তিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ন্যস্ত করা হইয়াছে। যেমন, বাড়ি-ঘর ব্যবস্থাপনা পূর্ত মন্ত্রণালয়কে
দোকানপাট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে,কল-কারখানা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান শিল্প মন্ত্রণালয়কে, পৌরসভা বহির্ভূত কৃষি জমি ভুমি মন্ত্রণালয়কে প্রদান করা হইয়াছে।অতএব জরিপ কালে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা ইহার স্থানীয় কর্মকর্তা পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকা অবশ্যই সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসারকে সরবরাহ করিবেন এবং তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নামে পরিত্যক্ত সম্পত্তির খতিয়ানভুক্ত করিবেন।
ওয়াকফ/দেবোত্তর কি?
মুসলমান সম্প্রদায়ের কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান মুসলিম আইন অনুসারে (মুসলিম যখন জনসাধারণের মঙ্গল, পরিজনদের ভরণ পূষণ ধর্মীয় ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা ইত্যাদির জন্য তাহার সম্পত্তি আল্লাহর নামে উৎসর্গ করতঃ একটি ট্রাস্ট গঠন করেন, তখন ঐ সম্পত্তি ওয়াকফ সম্পত্তি নামে অভিহিত।
আবার কোন হিন্দু ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান হিন্দু জনসাধারণের মঙ্গল,হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বা দেবতার ভোগ অর্চনা ইত্যাদি জন্য তাহার সম্পত্তি দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গকরতঃ অনুরূপ ট্রাস্ট গঠন করেন,তখন তাহা দেবোওর সম্পত্তি নামে অভিহিত। ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা আল্লাহ পাকের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করিলে
ঐ উৎসর্গকৃত সম্পত্তির মালিকানা যেমন আল্লাহর উপর বর্তায়,মোতওয়াল্লি ঐ সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণ করেন,দেবোওর সম্পত্তি ও দেবতার নামে উৎসর্গ করার সঙ্গে সঙ্গে দেবতার নামেই বর্তায়।ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা দেখাশোনা বা পরিচালনা দায়িত্ব মোতাওয়াল্লির আরো দেবোত্তর সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্বও সেবাইতের।
মোতওয়াল্লি পরিবর্তনশীল
ওয়াকফ দলিলে বর্ণিত পদ্ধতিতে মোতওয়ালি-পরিবর্তিত হইয়া থাকে।তখন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন কর্মকর্তা এই ব্যাপারে বিরোধ দেখা দিলে আইন মোতাবেক মীমাংসা করিয়া থাকেন।ওয়াকফ সম্পত্তি আল্লাহর নামে রেকর্ড করিতে হইবে।তবে পক্ষে অমুক মোতওয়াল্লি কথাটা উল্লেখ থাকিবে।দেবোওর সম্পত্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেবতার নামে রেকর্ড করিতে হইবে এবং পক্ষে অমুক সেবাইত রেকর্ড করিতে হইবে।
আদালতের স্বত্ব ঘোষণা ডিক্রি
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, অর্পিত বা খাসের জমির মালিকানা দাবি করিয়া সরকারকে পক্ষভুক্ত না করিয়া বা নোটিশ ইত্যাদি গোপন করিয়া কোন লোক দেওয়ানী আদালত হইতে স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রি লাভ করিতেছেন এবং ডিক্রির দখল দাবি করিয়া উপজেলা আদর্শ অফিস হইতে নামজারি করিয়া দিয়াছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ জরিপ চলাকালেও এই স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রি লইয়া রেকর্ড সংশোধনের জন্য আবেদন করিতে পারেন।বলাবাহুল্য যে,এইরুপ স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রির মাধ্যমেও বহু অর্পিত/খাস জমি সরকারের বেহাত হইয়া যাইতেছে।
আরো পড়ুন : জরিপ কি জরিপ কত প্রকার ও কি কি
জরিপে প্রাণীত রেকর্ড বা খতিয়ান তখনস্বত্বের প্রামাণ্য দলিল। দেওয়ানী আদালত কর্তৃক প্রদত্ত স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রি দখলস্বত্ব প্রতিষ্ঠা করেনা।সুতরাং এরূপ স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রির ভিত্তিতে নামজারী বা খতিয়ান প্রণীত হইতে পারে না।
এইরূপ খতিয়ান বে-আইনী। অতএব, কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বত্ব ঘোষণার ডিক্রির সহিত আদালতের মাধ্যমে দখল ঘোষণা এবং দখল গ্রহণের প্রমাণ উপস্থিত করিতে না পারিলে তাহার নামে খতিয়ানে দখলস্বত্ব উল্লেখ করা যাইবে না।
জনসাধারণের ব্যবহার্য জমি
জনসাধারণের ব্যবহার্য জমি যেমন রাস্তাঘাট,খাল, নদী,ঈদগাহ,খেলার মাঠ,গোচারণ
ভূমি ইত্যাদি সরকারি খাস খতিয়ানের রেকর্ড করিয়া মন্তব্য কলামে জনসাধারণের
ব্যবহার্য হেতু বন্দোবস্তের অযোগ্য মর্মে/লিখিতে হইবে।
সর্ব-সাধারণের ব্যবহার্য জমি যেমন খাল, রাস্তা, চরণভূমি ইত্যাদি পরিবর্তন হইয়া থাকিতে পারে।পুরাতন খাল/নদী ভরাট হইয়া বা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হইয়া বা নতুন রাস্তা তৈরি করার ফলে পুরাতন রাস্তা বা গোপাট এর শ্রেণী পরিবর্তন হইয়া থাকিতে পারে।
সর্ব-সাধারণের ব্যবহার্য এরূপ জমির শ্রেণীর পরিবর্তন হইয়া থাকিলে মাঠ পর্যায়ে জরিপ পরবর্তী পর্যায়ে সহকারী কমিশনার ভূমি এবং সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার যৌথভাবে সরে জমিনে পরিদর্শন করিয়া এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের মতামত পরিবর্তন হইলে
খাস খতিয়ানে যথাযথভাবে উল্লেখ করার জন্য সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ব্যবস্থা
গ্রহণ করিবেন।শ্রেণী বা ব্যবহারের পরিবর্তন হইলে খাস খতিয়ানে যথাযথভাবে
উল্লেখ করার জন্য সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।
হাটবাজার ব্যবস্থাপনা
কালেক্টর এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার তার এলাকাস্থ সকল হাট-বাজারের তালিকা সংরক্ষণ করবেন এবং সায়রাত মহল রেজিষ্ট্রারে যথারীতি লিপিবদ্ধ করবেন।হাট-বাজারের পেরীফেরী বা চৌহুদ্দি/চতুঃসীমা সঠিকভাবে বর্ণনা করে উহার পরিমাণ সম্বলিত একটি ম্যাপ সংরক্ষণ করবেন।
আরো পড়ুন : sa খতিয়ান কি?এস এ খতিয়ান ইতিহাস
সার্ভেয়ার দ্বারা প্রয়োজন হলে হাট-বাজার এলাকা জরিপ করে নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক বাজার নকশা সংরক্ষণ করা একান্ত প্রয়োজন।জরিপকালে মৌজা ম্যাপে এবং খতিয়ানে হাট-বাজারের রেকর্ড সঠিকভাবে প্রণয়নের জন্য সহকারি কমিশনার (ভূমি) হাট-বাজারের পেরীফেরী এবং তৎ সংক্রান্ত তথ্যাদি সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার কে সরবরাহ করবেন এবং ম্যাপ ও খতিয়ান সঠিকভাবে প্রণীত হয়েছে কিনা তার প্রতি লক্ষ্য রাখবেন।
লেখক এর মতামত
আমি (শামিম মোক্তার) শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক শ্রীপুর,গাজিপুর।জনসাধারণের ব্যবহার্য জমি এবং পরিত্যক্ত সম্পত্তি নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url