বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবাহের ফলাফল এবং দাম্পত্য অধিকার
অন্য ধর্মের লোকের সহিত বিবাহ
শাস্ত্রীয় ধর্মাবলম্বী(কিতাবিয়া)কোন মহিলাকে বিবাহ করার ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে পরিষ্কার অনুমতি রয়েছে।কিন্তু একজন মুসলমান কোন মূর্তি পূজারিণী কিংবা অগ্নি- উপাসিকাকে বিবাহ করতে পারে না।
একজন মূর্তি পূজারিণী কিংবা অগ্নি-উপাসিকার সাথে বিবাহ অবৈধ বা অনিয়মিত এবং বাতিল নহে।যারা স্বর্গীয় প্রত্যাদেশ কৃত ধর্মসমূহের বিশ্বাস করে,যেমন-ইহুদী, খ্রিস্টান প্রভৃতি তারা সকলেই কিতাবী শিয়াগণ অগ্নি উপাসকদের কিতাবিয়া শ্রেণীভুক্ত করে।
আরো পড়ুন : sa খতিয়ান কি?এস এ খতিয়ান ইতিহাস
একজন মুসলিম স্ত্রীলোক একজন মুসলিম পুরুষ ছাড়া অন্য কাকেও বিবাহ করতে পারে
না।শিয়া পুরুষ এবং নারী অমুসলিমদের স্থায়ী বিবাহ করতে পারে না তবে তারা মুতা
বা অস্থায়ী বিবাহ করতে পারে।
হানাফী মুসলিম পুরুষ মুসলিম নারীকে কিংবা কিতাবিয়া নারীকে বিবাহ করতে
পারে;কিন্তু মুসলিম নারী মুসলিম পুরুষ ছাড়া অন্য কাউকে বিবাহ করতে
পারেনা।এখানে কিতাবিয়া বলতে সেই ধর্মের অনুসারীগণকে বোঝায় যে ধর্মের ঐশী কিতাব
রয়েছে।যেমন-খ্রিস্টান, ইহুদী এবং সাবিয়ানকে কিতাবী বলা হয়।
আবার কোন মুসলিম পুরুষ যদি কোন ব্রাক্ষণ নারীকে কিংবা কোন একেশ্বরবাদী হিন্দু
নারীকে বিবাহ করে তবে সেই বিবাহ আমীর আলীর মতে বাতিল নয়, ফাসিদ মাত্র।এই ধরনের
স্ত্রী মুসলমান হলেই বিবাহ বৈধ হবে।কোন বিবাহিত মুসলিম যদি বাংলাদেশে কোন
ধর্মান্তরিত মুসলিম ইংরেজকে (মহিলা) বিবাহ করে তবে উক্ত বিবাহ বৈধ।
কিন্তু বাংলাদেশের কোন মুসলিম বাংলাদেশে তার স্ত্রীকে রেখে যদি ইউরোপে গিয়ে
কোন ইংরেজ খ্রিষ্টান মহিলা কে বিবাহ করে তবে পূর্বে এইরূপ বিবাহ বৈধ হতো।কারণ
যদিও বিলাতে এক স্ত্রীর বর্তমানে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহন অবৈধ তবুও ইংরেজ বা
মুসলিম বিবাহে কোন রেজিস্ট্রেশনের বিধান না থাকায় মুসলিম বিবাহকে কোনরূপ বিবাহ
বলে গণ্য করতো না।
এছাড়াও মুসলিম মতে একজন পুরুষ একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে।ইংল্যান্ডে
বহুবিবাহ ও অস্বীকৃত।সে কারণে এক স্ত্রী বর্তমান থাকতে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ
ইংল্যান্ডের আইনে অশিদ্ব।
স্ত্রীর বোনের সহিত বিবাহ
এমন দুইজন মহিলা যাদের একজন পুরুষ হলে তাদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ হতো।তাই এই
ধরনের একাধিক মহিলার সাথে বিবাহ বৈধ নয়। স্ত্রীর জীবিত কালে তার বোনকে বিবাহ
করলে এটা বৈধ না হলেও অনিয়মিত হবে।
স্ত্রীর বোন ছাড়াও তার বর্তমানে
অন্যান্য আরীয় যেমন-তার ভাগ্নীকে বিবাহ করলে এটিও অনিয়মিত বিবাহ হবে।তবে
পূর্বের স্ত্রী মারা গেলে কিংবা তাকে বিচ্ছেদ করলে পরবর্তীতে বিবাহটি বৈধ
হবে।
নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বিবাহ
মদ বা উত্তেজক সুরা পানে মাতাল ব্যক্তির বিবাহ অনিয়মিত হবে। তবে উক্ত ব্যক্তি সুস্থ ও সজ্ঞান হয়ে উক্ত বিবাহে সম্মতি দিলে তা বৈধ হবে।
সাক্ষী ছাড়া বিবাহ
একটি বৈধ বিবাহ সম্পন্ন হতে হলে উক্ত বিবাহের সাক্ষী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।একটি বিবাহে সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন সাবালক দুইজন পুরুষ অথবা একজন পুরুষ দুইজন মহিলা সাক্ষীর প্রয়োজন হয়। সাক্ষী ছাড়া বিবাহ বাতিল না হয়ে অনিয়মিত হবে।প্রতিকার স্বরূপ স্বামী-স্ত্রী উভয়েয় বিবাহের সত্যতার জন্য সাক্ষীর ব্যবস্থা থাকলে বিবাহটি আর অনিয়মিত না থেকে বৈধ বিবাহে রূপান্তরিত হবে।
ইদ্দত কালে বিবাহ
কোন মহিলা ইদ্দত পালন করছে এমতাবস্থায় তাকে বিবাহ করলে উক্ত বিবাহটি পরে বৈধ হবে। সুতরাং বিবাহিত অবস্থায় তার ইদ্দত শেষ হলে তা বৈধ বিবাহ হবে।
পঞ্চম স্ত্রী গ্রহণ
মুসলিম আইনে কোন ব্যক্তি একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে।তবে সেই ক্ষেত্রে চারজন স্ত্রীর বেশি নয়।যে ক্ষেত্রে চার স্ত্রীর বর্তমানে পঞ্চম স্ত্রী গ্রহণ করলে বিবাহটি অনিয়মিত হবে।তবে চার স্ত্রীর কাহাকেও বিচ্ছেদ করলে কিংবা তাদের কেহ মারা গেলে উক্ত বিবাহ বৈধ বিবাহ হবে।সুতরাং চার স্ত্রীর বর্তমানে যত সংখ্যক বিবাহ হবে সবই অনিয়মিত বিবাহ হবে।
আইনগত বাধা নিষেধ ভঙ্গ করে বিবাহ
বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার দ্বারা মুসলিম আইনে বিবাহ কতিপয় অপরিহার্য উপাদানের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি চুক্তি।মুসলিম আইনের বিধান মোতাবেক কোন মুসলমান বিবাহের ক্ষেত্রে যে সকল আইনগত বাধা নিষেধ রয়েছে, তা ভঙ্গ করে কোন বিবাহ অনুষ্ঠিত করলে আইনের দৃষ্টিতে এটা বাতিল বা অবৈধ বলে গণ্য হবে।
আরো পড়ুন : cs খতিয়ান কি?সি এস খতিয়ান চেনার উপায়
একইভাবে,এইরুপ নিষিদ্ধ সম্পর্ক মহিলাকে বিবাহ করলে উক্ত বিবাহ পক্ষগণের উপর কোন অধিকার ও দায়-দায়িত্ব সৃষ্টি করে না। অর্থাৎ এর কোন আইনগত মূল্য নাই।এছাড়া,এই রূপ বিবাহের ফলে যে সন্তান জন্মগ্রহণ করে একে জারজ বলে ধরে নেয়া হয়।এবং স্বীকৃতির মাধ্যমে ঐ সন্তানকে বৈধ প্রতিপন্ন করা যায় না।
দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার (Restitution of Conjugal Rights)
একটি বৈধ বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রীর উপর স্বামীর এবং স্বামীর উপরও তেমনি ভাবে কতিপয় অধিকার ও দায়িত্বের সৃষ্টি হয়।মূলতঃ এই অধিকার ও দায়িত্ব গুলি প্রায়শঃ আইন ভিত্তিক।এগুলোর মধ্যে কিছু অধিকার আছে যা পক্ষগণের চুক্তির মাধ্যমে হ্রাস বৃদ্ধি করা যায় বা পরিবর্তন করা যায়।
সুতরাং যে ক্ষেত্রে স্ত্রী,আইনসঙ্গত কারণ ছাড়া স্বামীর অধিকার অস্বীকার করে সে ক্ষেত্রে স্বামীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে অধিকার থাকে মামলা করার।আর এই অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলাকে বলে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার মামলা (Restitution of Conjugal Rights)
অনেক ক্ষেত্রে ধারণা হতে পারে যে,যেহেতু স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার অনিয়ন্ত্রিক ক্ষমতা রয়েছে স্বামীর সে কারণে দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা কেবল মাত্র স্বামীই করতে পারে,এই ধারণাটি ভুল।যদি কোন স্ত্রী আইন সংগত কারণ ছাড়া স্বামীর সহিত বসবাস করতে অস্বীকার করে,তাহলে স্বামী ঐ স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার করার দাবিতে মামলা করতে পারে।
আবার একইভাবে স্ত্রীও তার দাম্পত্য বা বৈবাহিক দাবি গুলো পূরণ করবার দাবিতে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।সে কারণে স্ত্রী কর্তৃক এইরুপ মুকাদ্দমা দায়ের করা হলে স্বামীকে বিবাহ এবং মোকদ্দমা উভয়টির পরিসমাপ্তি ঘটতে প্রলুব্ধ করতে পারে। সুতরাং এক্ষেত্রে স্বামীর যে কোন পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়ক হবে।
বিবাহের ফলে স্বামী স্ত্রীর প্রধান দায়িত্ব হল একত্রে বসবাস।অর্থাৎ এক্ষেত্রে একত্রে বসবাস অর্থ শুধুমাত্র একসঙ্গে থাকলে যথেষ্ট হবে না।স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আইনগত অধিকার ও দায়-দায়িত্ব সমূহ যথাযথ পালন করা সহ উভয়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সুসম্পর্ক বজায় রাখাও উভয়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য বটে।
কিন্তু যদি কোন স্ত্রী আইনসঙ্গত কারণ ছাড়া স্বামীর সহিত বসবাস করতে অস্বীকার করে, তাহলে উক্ত স্বামী ঐ স্ত্রীর বিরুদ্ধে তার দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধার করার দাবিতে মামলা করতে পারে। আবার একইভাবে স্ত্রী ও তার দাম্পত্য বা বৈবাহিক দায় গুলি পূরণ করার দাবিতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।
সুতরাং একজন অন্যজনের দায়-দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি দেওয়ানি আদালতের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারে।দাম্পত্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আদালত ডিক্রি দিতে পারে।বিবাহের সময় কিংবা তারপর স্ত্রী স্বামীর সাথে পারস্পরিক যে কোন প্রকার চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে।
তবে উক্ত চুক্তি অবশ্যই ন্যায়পরতা ও আইনসম্মত হতে হবে।বিবাহিত জীবন কিভাবে পরিচালিত হবে তা চুক্তির মাধ্যমে বলবৎ করা যায়।আবার আদালতে না গিয়েও পূর্বে চুক্তির মাধ্যমে স্ত্রী বিবাহ বন্ধন ছিন্ন করার অধিকার যুক্তির দ্বারা বলবৎ করতে পারে।এক্ষেত্রে যে সকল শর্তাবলী আইনের ধারা বলবৎ করা যায় তা নিম্নরূপ-
(ক)স্ত্রীর বর্তমানে স্বামী দ্বিতীয়বার বিবাহ করবে না।
(খ)স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে স্বামী থাকে আলাদা রাখবেন না।
(গ)একটি
নির্দিষ্ট সময় মেয়াদ অতিরিক্ত সময় স্ত্রীকে ছেড়ে স্বামী পৃথক বাস করবেন
না।
(ঘ)স্বামী এবং স্ত্রী একটি নির্দিষ্ট স্থানে বাস করবেন।
(ঙ
দেনমোহরের একটি অংশ তৎক্ষণাৎ প্রদান করতে হবে। এবং অবশিষ্ট অংশ প্রদেয় হবে
মৃত্যু বা তালাক দ্বারা বিবাহ বিচ্ছিন্ন হবার পর।
(চ) খোরপোষের জন্য
স্বামী স্ত্রীকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করবেন।
(ছ) স্ত্রীর
পূর্বের স্বামীর কোন সন্তান বর্তমান থাকলে তাদের প্রতিপালনের দায়িত্ব স্বামী
গ্রহণ করবে।
(জ) স্ত্রী আরীয় স্বজনদের বাড়িতে যাওয়া আসার
ক্ষেত্রে কোনরূপ বাধা প্রদান করবে না।
সুতরাং বিবাহের সময় বা তারপর
স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে যে কোন প্রকার চুক্তি হতে পারে। মূলতঃ বিবাহ সম্পর্ক
নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যে চুক্তি হয়, তাকে আইনের
চোখে বৈধ বলে গণ্য করা হয়। সুতরাং কোন এক পক্ষ চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করলে আদালত
অপরপক্ষকে উক্ত চুক্তিটি প্রতিপালন করতে বাধ্য করতে পারে।
লেখক এর মতামত
আমি (শামিম মোক্তার) শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক শ্রীপুর,গাজিপুর।বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবাহের ফলাফল এবং দাম্পত্য অধিকার নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url