হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় যেনে নিন

আজকে আমি আপনাদের সাথে সেয়ার করবো হেবার ঘোষণাপত্র দলিল নিয়ে।আমরা জানবো হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় হেবা দলিল আইন অনুযাই যদি রেজিষ্ট্র হয়ে থাকে তাহলে হেবা দলিল বাতিল করা যায় না।আজকে আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করবো কখন হেবার ঘোষণাপত্র দলিল স্থগিক বা প্রথ্যা হার করা যাই এ বিষয় গুলো নিয়ে।

হেবা-দলিল

হেবার ঘোষণাপত্র দলিল সর্ম্পকে আমাদের সকলেরই জানা দরকার।হেবার ঘোষণাপত্র দলিল কি বাতিল করা যায় কি না,কে কাকে হেবা করতে পারবেন,হেবার ঘোষণাপত্র দলিল দিয়ে নাম জারি হয় কিনা।হেবার ঘোষণাপত্র দলিল নিয়ে বিস্থারিত আলোচনা থাকবে।

পোস্টসূচীপত্র:হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় যেনে নিন

হেবা বা দান রেজিস্ট্রি আবশ্যক কিনা?

মুসলিম আইনের অধীনে কোন হেবা বা দান করতে হলে এটি বাধ্যতামূলক নয় যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।লিখিত না হলে মৌখিক হলেও এটি সিদ্ধ হবে।দাতা কর্তৃক দানের ঘোষণায় গ্রহীতা এটি গ্রহণ করলে এবং দাতা গ্রহীতাকে দখল অর্পণ করলে দানকার্য সম্পন্ন হয়।

আরো পড়ুন : সাব কবলা দলিল এর রেজিস্ট্রেশন খরচ কত যেনে নিন

সুতরাং হেবার ঘোষণাপত্র দলিল এর জন্য যে শর্ত নির্ধারিত হয়েছে তা যদি পালন করা হয়ে থাকে তাহলে হেবাটি বৈধ ও বলবৎ হবে লিখিত না হলেও কোন সমস্যা হবে না।কিন্তু হেবার ঘোষণাপত্র দলিল এর নির্ধারিত শর্ত যদি পালন না করা হয় তাহলে ওই হেবার ঘোষণাপত্র দলিল লিখিত বা রেজিস্টিকৃত হলেও তা বৈধ বা বলবৎ হবেনা।

কিন্তু সম্পত্তি হস্তান্তর আইনে দানের বিষয়বস্তু স্থাবর হলে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে,আবার অস্থাবর হলে মূল্য নির্বিশেষে তা রেজিস্ট্রি হওয়া আবশ্যক।সুতরাং,মূল কথা হলো দখল অর্পণ ছাড়া দানকার্য সম্পন্ন হয় না।এমনকি দানপত্রটি রেজিস্টিকৃত হলেও এর দ্বারা হস্তান্তর চাহিদা পূরণ হয় না।

কখন হেবা বা দান স্থগিত বা প্রত্যাহার করা যায় না

মুসলিম আইন অনুযায়ী হেবা বা দান যেকোনো পরিস্থিতিতে স্থগিত বা প্রত্যাহার করা হোক না কেন একমাত্র দাতা ওই হেবা বা দান প্রত্যাহার করতে পারবেন।এমনকি দাতার কোন বংশধর বা ওয়ারিশ ওই দান প্রত্যাহার করতে পারবেনা।

যে সকল ক্ষেত্রে হেবার ঘোষণাপত্র দলিল (dolil) বা দান প্রত্যাহার করা যায় না:

  • স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরকে দান করলে হেবার ঘোষণাপত্র দলিল (dolil) বা দান বাতিল করা যায় না।এই দান স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও অটুট থাকবে।তবে শিয়া মতে,এইরূপ দান পরবর্তীতে বাতিল হতে পারে।
  • দাতা মারা যাওয়ার পর যদি তার উত্তরাধিকারীগণ এটি বাতিল বা প্রত্যাহার করতে চায় তাহলে তা বাতিল করতে পারবেনা।সুন্নি মতে,যাকে দান করা হয়,ঐ ব্যক্তি যদি দাতার সাথে নিষিদ্ধ স্তরের ভিতরের সম্পর্কিত হয়।
  • গ্রহীতা মারা গেলে এই দান প্রত্যাহার হয় না।তবে এই দানকৃত সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারী গণের মধ্যে বন্টিত হবে।
  • দানকৃত বিষয় বস্তুটি যখন দানগ্রহীতা কর্তৃক দান,বিক্রয় বা অন্য কোন ভাবে হস্তান্তরিত হয়ে যায়।
  • যখন দানকৃত বিষয়বস্তুটি হারিয়ে যাবে বা ধ্বংস হয়ে যাবে।
  • যখন হেবার ঘোষণাপত্র দলিল (dolil) বা দানকৃত বিষয়টি এমনভাবে রূপান্তরিত হয় যে,একে সনাক্ত করার উপায় থাকে না।যেমন-কোন পতিত বা আবাদী জমিতে বাড়ি নির্মাণ করে এর পরিবর্তনের ফলে চিনবার উপায় না থাকে সেই ক্ষেত্রে।
  • যখন দানকৃত সম্পত্তির যে কোন কারনে হোক মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
  • দাতা যদি দানের বিনিময়ে কোন কিছু গ্রহণ করে থাকে।
  • যদি দানকৃত সম্পত্তিটি সদকার জন্য হস্তান্তরিত হয়ে থাকে।
  • যদি দানকৃত সম্পত্তিটি মোহরানা পরিশোধের বিনিময়ে হয়ে থাকে।
  • যখন দানকৃত সম্পত্তিটি ধর্মীয় বা আধ্যারিক কারণে হয়।

হেবার ঘোষণাপত্র দলিল (dolil) বা দান কখন বাতিল হয়

মুসলিম আইনের বিধান অনুযায়ী নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে এটি হেবা বা দান বাতিল বলে গণ্য হবে-

মৃত্যুর ক্ষেত্রে

দান গ্রহণের পূর্বে যদি দান গ্রহীতার মৃত্যু ঘটে, সেক্ষেত্রে এই দান বাতিল বলে গণ্য হবে।

দখল প্রদানের পূর্বে

দান গ্রহিতার উক্ত দানকৃত সম্পর্কে দখল করার পূর্বে দাতা যেকোনো সময় সংশ্লিষ্ট দানটি বাতিল করতে পারেন।কারণ দখল প্রদানের পূর্বে দান আদৌ কখনো সম্পূর্ন বা কার্যকর হয় না।

বর্তমান ও ভবিষ্যৎ দান

বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন সম্পত্তি একত্র করে দান করলে,সে সুস্থ অর্থাৎ ভবিষ্যতের সম্পত্তির দান বাতিল বলে গণ্য হবে। 

দুই বা ততোধিক দান গ্রহীতা হলে

যদি দুই বা ততোধিক দান গ্রহীতাকে কোন একটি জিনিস দান করা হয় এবং তাদের মধ্যে একজন যদি এই দান গ্রহণ না করে তবে কেবলমাত্র তার অংশ সম্পর্কে দান বাতিল বলে গণ্য হবে।

দাতার ইচ্ছাক্রমে রদ

কোনো দানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষ সমূহ যদি এই মর্মে একমত হন যে, দাতার ইচ্ছাক্রমে এটি সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে রদ হয়ে যাবে তাহলে এই দান ক্ষেত্র বা পরিস্থিতির অনুসারে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে।

আদালতের মাধ্যমে

দানকৃত বিষয়বস্তু একবার দখল অর্পণ হলে আদালতের ডিক্রী ছাড়া এটি আর বাতিল করা যায় না।সুতরাং গ্রহীত দানের বিষয়বস্তু আদালতের ডিক্রী প্রদানের পূর্ব পর্যন্ত দান গ্রহীতা এটি ব্যবহার ও হস্তান্তর করতে পারে।

নাবালকের বরাবর হেবা বা দান

মুসলিম আইন অনুযায়ী সন্তানের বরাবরে দান করা হলেও তা শর্ত অনুযায়ী অন্য সকল দানের মত দখল অর্পণ করা আবশ্যক হয়।তবে নাবালকের বরাবরে দান এর ক্ষেত্র ভিন্ন।অর্থাৎ যখন একজন নাবালকের পিতা বা পিতামহ বা তার অভিভাবক তাকে দান করে সেক্ষেত্রে কোন আনুষ্ঠানিক দখল 

আরো পড়ুন : পুরাতন দলিল এর লেখা বোঝার উপায় যেনে নিন

অর্পণের প্রয়োজন হয় না।একজন মা কোন শিশু সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালনস্বরূপ তাকে সম্পত্তি দান করলে এবং সেই শিশু সন্তানের আলাদাভাবে কোন অভিভাবক না থাকলে সেই ক্ষেত্রে দখল অর্পণের প্রয়োজন নেই।কিন্তু এই নাবালকের পিতা জীবিত থাকলে এ দানকৃত সম্পদের দখল নাবালকের পিতার বরাবরে অর্পণ করতে হবে।

সহ-শরীকের বরাবরে হেবা বা দান

মুসলিম আইনে কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যক্তির বরাবরে দান করতে পারে।এক্ষেত্রে কোন অংশীদার তার অংশীদার বরাবরে দান করলে এই দান বৈধ হবে।দাতা যদি এই দান গ্রহীতা এবং সহ অংশীদার একই বাড়িতে বসবাস করা অবস্থায় বাড়িটি তার সহ অংশীদার বরাবরে দান করে সেই ক্ষেত্রে সহ অংশীদার এ বাড়িতে পূর্ব থেকে বসবাসের কারণে দখলে আছে এক্ষেত্রে সিদ্ধ এবং দানটি বৈধ হবে।

স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর বরাবরে হেবা বা দান

মুসলিম আইন অনুযায়ী স্বামী তার স্ত্রীর বরাবরে দান করতে পারে।এক্ষেত্রে দখল হস্তান্তর অথবা স্ত্রী কর্তৃক এ দানকৃত বিষয়ের প্রকৃত দখলের আবশ্যকতা নেই।শুধুমাত্র স্বামী কর্তৃক এই দানের ঘোষণাই যথেষ্ট।আবার স্বামী যদি তার স্ত্রী বরাবরে এই দানকৃত বিষয়বস্তুটি এই মর্মে নিজ 

আরো পড়ুন : নাম দিয়ে জমির দলিল অনুসন্ধান করুন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে

নাম পরিবর্তন করে স্ত্রীর নাম যুক্ত করে তাহলে স্ত্রীকে দখল অর্পণ করা হয়েছে বলে প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হবে।স্বামী-স্ত্রী বাড়িতে বসবাস করছে এমন অবস্থায় বসবাসরত বাড়িটি স্ত্রীর নামে দান করলে এক্ষেত্রে পুনরায় দখল দেওয়ার প্রয়োজন নেই।এক্ষেত্রে নতুন করে দখল দেওয়ার প্রয়োজন নেই এইরুপ দখল অনুমান সিদ্ধ এবং দানটি বৈধ হবে।

ট্রাষ্টের মাধ্যমে হেবা বা দান

মুসলিম আইনে ট্রাষ্টের মাধ্যমে দান করা যায়।এক্ষেত্রে দানকৃত বিষয়বস্তুটির অবশ্যই দখল হস্তান্তর করতে হবে।এই রূপ দানের ক্ষেত্রে দাতা তার মালিকানাসত্ব সহ দখলিসত্ব হস্তান্তরের মাধ্যমে সেই বস্তুর উপর থেকে তার সকল নিয়ন্ত্রণ হতে নিজেকে মুক্ত করতে হবে।

আরো পড়ুন : দলিলে দাগ ভুল হলে করণীয়-কিভাবে দলিল সংশোধন করবেন

যে কোন প্রতিষ্ঠান যেমন-মসজিদ বা কোন ধাতব্য প্রতিষ্ঠান এর বরাবরে ট্রাষ্টের মাধ্যমে দান করা যায় কারণ এমন প্রতিষ্ঠানসমূহ কে কৃত্রিম ব্যক্তি বলে গণ্য করা হয়।সুতরাং এরূপ দান বৈধ।তবে কোন ব্যক্তি যদি উইলের মাধ্যমে ট্রাষ্ট ঘোষণা করে এবং সেই ট্রাষ্টের গ্রহীতা হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করে তাহলে সে ক্ষেত্রে দখল অর্পণের প্রয়োজন নেই।

শর্ত সাপেক্ষ হেবার ঘোষণাপত্র দলিল (dolil) বা দান

দাতা কর্তৃক গ্রহীতার বরাবরে প্রদত্ত শর্ত অনুসারে অনির্দিষ্ট কোন ঘটনার উপর ভিত্তি করে দান করা হয় তাকে মুসলিম আইনের শর্তসাপেক্ষ দান বলা হয়ে থাকে।শর্তসাপেক্ষ দানের ক্ষেত্রে, দানকৃত সম্পত্তি দখল হস্তান্তর করার প্রয়োজন হয় না। 

অর্থাৎ এইরুপ দানের ক্ষেত্রে এ সম্পত্তি তৎক্ষণাৎ দান গ্রহীতা কে প্রদান করা হয় না।কারণ এই দান শর্ত প্রদত্ত অনির্দিষ্ট ঘটনার উপর নির্ভরশীল সেই কারণে এইরুপ দানকে বাতিল বলে গণ্য করা হয়।

যখন কোন দান এমন কোন শর্তসাপেক্ষে করা হয়,যা দানটি পরিপূর্ণ হতে বাধা প্রধান করে,তখন আরোপিতা শর্তটি বাতিল হবে এবং দানটি এমনভাবে কার্যকরী হবে,যেন এতে কোন শর্ত আরোপিত হয় নাই। যেমন-শফিক এই বলে 

আরো পড়ুন : জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পর দলিল পাওয়া যায়

একটি সম্পত্তি কুদ্দুসের বরাবরে দান করল যে কুদ্দুসের মৃত্যুর পর এটি তপন পাবে।এক্ষেত্রে কুদ্দুসের বরাবরে দানটি বৈধ হবে,কিন্তু এর সাথে সংযুক্ত শর্তটি বাতিল হবে।সুতরাং কুদ্দুস এই দানকৃত সম্পত্তিটি চূড়ান্তভাবে পাবে কিন্তু কুদ্দুসের মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি তপন পাবে না। সে ক্ষেত্রে কুদ্দুসের ওয়ারিশগণ সেই সম্পত্তি পাবে।

আবার যদি কোন শর্তসাপেক্ষ দান কোন বিনিময়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়,তবে তা বাতিল হয়ে যাবে।এক্ষেত্রে উদাহরণস্বর,যদি কোন স্ত্রী তার স্বামীকে এই মর্মে ঘোষণা করে যে,“আমি যদি মারা যায়,তবে তুমি আমার দেনমোহর থেকে মুক্ত”।

এইরূপ ণাকে কোন বৈধ বা অব্যাহতি বলে গণ্য করা যাবে না।কারণ এই শর্তসাপেক্ষে কোন দানে হস্তান্তরের উপর আরোপিত পূর্ণ কিংবা আংশিক বাধা নিষেধ অবৈধ।

হেবা দলিল নামজারি

হেবা দলিল নামজারি আপনারা যদি হেবা সূত্রে জমির মালিখ হয়ে থাকেন তাহলে হেবা দলিল নামজারি করতে পারবেন এবং এর সাথে আপনি হেবা দলিল এ জমির মালিক হয়ে অন্য যায়গাতে জমি বিত্রিু করতে পারবেন।

লেখক এর মতামত

আমি(শামিম মোক্তার)শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্র অফিসরে দলিল লেখক শ্রীপুর গাজিপুর।হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় এ নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url