অসিয়ত করার নিয়ম যেনে নিন
আপনারা যারা অছিয়ত নামা দলিল সর্ম্পকে জানতে চান তাদের জন্য আজকের এই আলোচনা।অছিয়ত নামা দলিল কি?অসিয়ত করার নিয়ম,কে কাকে অছিয়ত করতে পারে,অছিয়ত নামা দলিল এর সংঙ্গা এ গুলো নিয়ে আলোচ না করবো।
উইল বা অছিয়ত এর সংজ্ঞা মুসলিম আইনে সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উইল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।উইলকে মূলত ঐশী ব্যবস্থা হিসেবে অভিহিত করা হয়।আইনের পরিভাষায় উইল কে অছিয়ত বলা হয়।
পোস্টসূচীপত্র:অসিয়ত করার নিয়ম যেনে নিন
এছাড়া অছিয়তের অন্য আরেকটি অর্থ হচ্ছে ইচ্ছাপত্র বা নির্দেশ।মুসলিম আইন অনুযায়ী উইল অছিয়ত শব্দের অর্থ হল একটি আইনসিদ্ধ ঘোষণা যার দ্বারা ঘোষণাকারী ব্যক্তি তার সম্পত্তি সম্পর্কিত কোন ইচ্ছা বা আকাঙ্ক্ষা তার মৃত্যুর পর পূরণ হোক তা প্রকাশ করেন।আরো পড়ুন : পুরাতন দলিল এর লেখা বোঝার উপায় যেনে নিন
উইলের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে বিভিন্ন আইনবিদগণ বিভিন্নভাবে তাদের মতবাদ
প্রকাশ করেছেন-
আইনবিদ জারমান বলেছেন-“উইল”হলো এমন একটি দলিল যার দ্বারা
কোন ব্যক্তি তার সম্পত্তির এমন বিলি ব্যবস্থা করতে পারেন,যা তার মৃত্যুর পর
কার্যকরী হবে।
উইলের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন,“উইল হলো কোন মুসলমানের
সম্পত্তির বিলিবন্টন সম্পর্কীয় এমন একটি আইন সম্মত ঘোষণা যা তার মৃত্যুর পর
কার্যকর হবে বলে প্রত্যাশা করে”।
উইল বা অছিয়ত নামা দলিলের মূল উৎস কোরআন।প্রাক ইসলামী যুগে উইলের অবাধ অধিকার বিদ্যমান ছিল।ইসলামিক আইন আবির্ভাব এর পূর্বে সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তি যেভাবে খুশি তার সম্পত্তি যেকোনো লোকের বরাবর অছিয়ত নামা দলিল করে যেতে পারত।
এর পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল।তার সম্পত্তি ওয়ারিশদের না দিয়ে ওয়ারিশানান অথবা অপরিচিত কোন ব্যক্তিকে তার সম্পত্তি অছিয়ত নামা দলিল মাধ্যমে বিলি বন্টন করার সম্পূর্ণ অধিকার ছিল।তবে তাই ইসলামিক আইন আবির্ভাব এর পরে সংকীর্ণ হয়ে যায়।
পবিত্র কুরআন শরীফে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি কিভাবে বিলিবন্টন হবে তা স্পষ্টভাবে ইসলামিক আইনে নির্দেশনা দেয়া আছে।তাই অছিয়ত নামা দলিল করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালার এই বিধানবলীকে নস্যাৎ করা উচিত নয়।তাই,অছিয়ত নামা দলিল দ্বারা সম্পত্তির বিলি ব্যবস্থা করা সব সময় ঠিক
আরো পড়ুন : নাম দিয়ে জমির দলিল অনুসন্ধান করুন সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে
নয়।তবে মৃত্যুর আগে সবাই তার বংশধরদের যথারীতি আদেশ নির্দেশ দিয়ে যাবে এবং আইনের সীমার মধ্যে যতটুকু পারা যায় ততটুকু পরিমাণ সম্পত্তির ব্যবস্থা করে যাবে।উইল ব্যবস্থা পবিত্র কুরআনের একটি নিয়ামক।কোরআন
নির্দেশিত উত্তরাধিকার আইনের ক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি উত্তরাধিকারী নন তবে মৃত্যুর পূর্বে মৃত ব্যক্তির সেবা করেছে সে ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার আইনে তাকে কিছু দেওয়ার সুযোগ না থাকলেও অছিয়ত নামা দলিলব্যবস্থায় ঐ ব্যক্তিকে কিছু দেওয়ার জন্য সম্পত্তির অধিকারী ব্যক্তিকে উইল সুযোগ করে দেয়।তবে এই সুযোগে অন্যের ক্ষতি করে বিলিবন্টন করা উচিত নয়।
উইল বা অছিয়ত নামা দলিল করার অধিকার মুসলিমদের মধ্যে দুইটি বিশেষ সীমায় নিয়ন্ত্রিত
প্রথমত:সে তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের অধিক সম্পত্তি উইল করতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত:
সে তার ওয়ারিশদের বরাবরে মিল করতে পারে না।হিদায়ার মতে, উইল করা আইনসম্মত, তবে
তা একটা সীমার মধ্যে করতে হবে।সুতরাং ইসলামী আইনে একজন ব্যক্তির বরাবরে সমগ্র
সম্পত্তি দান করা যায় কিন্তু উইলের ক্ষেত্রে এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করা যায়
না।
আরো পড়ুন : দলিলে দাগ ভুল হলে করণীয়-কিভাবে দলিল সংশোধন করবেন
উইল বা অছিয়ত নামা দলিল করার জন্য কোন বিশেষ অনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয় না।কেননা মুসলিম আইনে অছিয়ত নামা দলিল করার ক্ষেত্রে কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুনের উল্লেখ নেই।তবে একজন মুসলমান অছিয়ত নামা দলিল করার ক্ষেত্রে অছিয়ত নামা দলিল লিখিত হওয়া আবশ্যক।
আবার মৌখিক অছিয়ত নামা দলিল ও সম্পূর্ণ বৈধ তবে,এক্ষেত্রে সম্পত্তি সম্পর্কে দাতার অভিপ্রায় অর্থাৎ তার মৃত্যুর পর এই সম্পত্তি কিভাবে পরিচালিত বা বন্টিত হবে সে সম্পর্কে উইলকারূীর বাসনা যে কোন প্রকৃতিতে হোক না কেন তা যথেষ্ট স্পষ্ট সহকারে ঘোষিত হতে হবে, যাতে এটি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
লিখিত আকারে কোন উইল হলে তাতে স্বাক্ষর থাকার আবশ্যকতা নেই এবং এটি সত্যায়িত হওয়ারও প্রয়োজন নেই।যে দলিলের মাধ্যমে উইল বা অছিয়ত নামা দলিল করা হয়, তাকে অছিয়ত নামা দলিল বলা হয়।অছিয়ত নামার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে অছিয়তকারী উইল মৃত্যুর পর কার্যকরী হয়।
আরো পড়ুন : জমি রেজিস্ট্রি করার কত দিন পর দলিল পাওয়া যায়
যে ক্ষেত্রে হস্তান্তর তার মৃত্যুর পর কার্যকরী হবে,সে ক্ষেত্রে উইলনামা সম্পূর্ণ বৈধ বলে গণ্য হবে।কারণ উইল দাতার বিলি ব্যবস্থা কার্যকর উইল দাতার মৃত্যুর পর।সুতরাং,উইলের সম্পত্তি গ্রহণকারীকে,উইল সম্পাদনের সময় এবং উইলদাতার মৃত্যুর সময় অবশ্যই জীবিত থাকতে হবে।
উইল বা অছিয়ত নামা দলিলের বিষয়বস্তু
নাবালক নয় এমন প্রত্যেক সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন মুসলমান ব্যক্তি উইল বা অছিয়ত নামা দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে।অর্থাৎ অছিয়ত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সাবালক ও সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।১৮৮৫ সালের সাবালকত্ব আইনের ৩ নং ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তির
বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হলে তাকে সাবালক মনে করা হবে।তবে, কোন নাবালকের ক্ষেত্রে যেখানে এই নাবালক ও তার সম্পত্তি দেখাশোনার জন্য একজন অভিভাবক নিয়োগ করা হয়েছে অথবা ওই নাবালকের ২১ বছর বয়স পূর্ণ হলে সে নাবালকত্ব প্রাপ্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে।নাবালকের বয়স
সীমা ১৮ বছর দেওয়া হলেও উইলের মূল শর্তটি হল হস্তান্তরের
ব্যাপারে দাতার পূর্ণ উপলব্ধি বা বোঝার ক্ষমতা।ইসলামিক আইনে ১৫ বছর হলেই
বালেক বলে গণ্য করা হয়।কিন্তু বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী ১৮ বছর পূর্ণ না
হলে কেউ উইল করতে পারবে না, কেননা নাবালকের অছিয়ত বৈধ নয়।
আরো পড়ুন : জমি বিক্রি করতে কি কি কাগজ লাগে যেনে নিন
মাতাল,পাগল বা উন্মাদ ব্যক্তির উইল বৈধ নয়।তবে এরূপ অবস্থায় কেউ উইল
করলে এবং পরবর্তীতে সুস্থ হলেও সেই উইল বৈধ বলে গণ্য হবে না।আবার অছিয়ত
করার পর যদি কোন অছিয়তকারী পাগল হয়ে যায় তাহলে সে ক্ষেত্রেও অছিয়ত
বৈধ হবে না।
কোন ব্যক্তি যদি আত্মহত্যা করা এবং কোন অপরাধমূলক কার্যসম্পন্ন করে ফিল করার মানষ করে তাহলে সে ক্ষেত্রে উইল বৈধ বলে গণ্য করা হয়।তবে শিয়া আইনে এটি বৈধ নয়।আবার কোন ব্যক্তি যদি প্রথমে উইল করে এবং
পরবর্তীতে বিষ পান করে সে ক্ষেত্রে স্থির হয় যে উইলটি বৈধ।যদিও এই
উইলটি সম্পাদন কালে ওই ব্যক্তির মনে আত্মহত্যার চিন্তায় মগ্ন ছিল।আবার
উইলকারী ব্যক্তি ধর্মান্তরিত হলে হানাফী মতে এই উইল বৈধ হলেও মালেকী মতে
বৈধ বলে গণ্য করা হয় না।
হস্তান্তর যোগ্য যে কোন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি উইল করা যায়। উইলকারীর দখলে নাই এমন সম্পত্তিও উইল করা যাবে।তবে মৃত্যুর সময় এই সম্পত্তির অস্তিত্ব থাকতে হবে।ভবিষ্যতে কার্যকারী হবে এমন সম্পত্তি উইল করা যায় না। যেমন-উইলকারী যদি এই মর্মে উইল করে যে,
আরো পড়ুন : হেবা দলিল কি এবং কে কাকে হেবা করতে পারে যেনে নিন
এই কাঁঠাল গাছে ভবিষ্যতে যে কাঁঠাল হবে তার এক-তৃতীয়াংশ কেউ উইল হিসেবে পাবে।এরূপ হুইল ভবিষ্যতের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় বৈধ বলে গণ্য হবে না।উইলে শর্ত থাকা বাঞ্ছনীয় নয় তবে শর্ত থাকলেও তা বৈধ হবে।তবে এরকম উইলে মনে করতে হবে যে কোন শর্ত আরোপ করা হয়নি।
এছাড়া কোন ঘটনা বা পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য যে উইল করা হয় সেই উইল বৈধ হবে না।আবার একজনকে সম্পদ এবং অন্যজনকে এই সম্পদের সুবিধা উল্লেখ করা যায়।যেমন-কোন ব্যক্তি একজনকে বাড়ি এবং অন্যজনের বরাবর এই বাড়ির ভাড়া ভোগ করার
অধিকার উইল করতে পারে অথবা একজনকে কোন জমি বিল করলে ওই জমি থেকে প্রাপ্ত ফসল
অন্য কাউকে ভোগ করার জন্য উইল করা যেতে পারে।তবে উইলকারীর মৃত্যুর পর
উইলকৃত সম্পত্তি কিভাবে পরিচালিত হবে যদি তা উল্লেখ না থাকে তাহলে ১৮৮১ সালের
কার্যকারী প্রোবেট এন্ড এডমিনিস্ট্রেশন এ্যাক্ট এর বিধান অনুযায়ী
এইগুলি নির্ধারিত হয়ে থাকে।
মুসলিম আইন অনুযায়ী কোন বৈধ উইল করার জন্য উইলের লিখিত ভাবে থাকার কোন প্রয়োজন নেই।আবার লিখিত হলেও এতে নাম সহি বা দস্তখত করার কোন আবশ্যকতা নেই আবার নাম সহি করা হলেও এতে সত্যায়িত করার কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।
আরো পড়ুন : দলিল কি এবং ভিবিন্ন প্রকার দলিল এর পরিচয় যেনে নিন
তবে অলিখিত বা মৌখিক উইল করা হলে এটি যথাযথভাবে সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণিত হতে হবে।দলিল গত ভাবে কাগজপত্রের মাধ্যমে যে উইল লিখিত হয়ে থাকে তাকে “তামালিক-নামা” বা “হস্তান্তর করণ পত্র” বলা হয়। ইচ্ছা পেতে সরাসরি লিপিবদ্ধ করা হয়।
শুধুমাত্র উইল প্রধান কারীর উইল করার সুস্পষ্ট ইচ্ছা নিশ্চিত করা গেলে,কোন বিশেষ প্রকারের মৌখিক ঘোষণা কোন প্রয়োজন নাই।সুতরাং মৌখিকভাবে উইল প্রমাণের বিষয়টি অতি কঠিন কাজ।সে কারণে ঘটনার যথার্থতা দ্বারা এবং
স্থান কালের সাথে জড়িত প্রতিটি ঘটনা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এটি প্রমাণ করতে
হবে।মৃত উইলকারী ব্যক্তি কি বলেছিলেন এবং সংশ্লিষ্ট ঘটনাবলী, অবস্থা,
উইলকারীর আদেশ নিষেধ বা উপদেশ সম্পর্কে প্রতিটি আদালতকে লক্ষ্য রাখতে হবে।মৃত
ব্যক্তির এসব কাজের ধারা আদালতকে নিশ্চিত হতে হবে যে,মৃত ব্যক্তির উইল
টি সঠিক ও যথার্থ ইচ্ছার মাধ্যমে করা হয়েছিল।
অছিয়ব কারিকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির বরাবরে উইল বৈধ হবে না।আবার কোন ব্যক্তির কার্যকলাপের ধারা উইলকারীর আত্মহত্যার কারণ হলে ওই ব্যক্তির বরাবর উইলটি বৈধ হবে না।দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি উইল করলে সেই উইল বৈধ হবে না।আবার কোন ব্যক্তি ঋণী থাকলে তার ঋণের পরিমাণ যদি তার মোট সম্পত্তির মূল্যের বেশি হয় তাহলে ঐ ব্যক্তির উইল করা ঠিক হবে না।
উইল করার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যে উইল গ্রহীতা উইলকৃত সম্পত্তি জনক গ্রহণ করতে পারে।তাই কোন মৃত ব্যক্তির নামে উইল করা যাবে না তবে অজাত ব্যক্তির বরাবরে উইল করা যায় যদি সে তার মাতৃ গর্ভে অস্তিত্ব থাকে।উইলের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রশ্ন অবান্তর।
আরো পড়ুন : ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ অনলাইনে মোবাইল দিয়ে করুন
যেকোনো ধর্মের ব্যক্তিকে উইল করা যায়, তবে শাফি বিধান মোতাবেক অমুসলিমদের বরাবর উইল বৈধ নয়। তবে যে কোন মুসলিম আশ্রিত ব্যক্তির বরাবরে উইল করলে উইলটি বৈধ হবে।
অছিয়তকারীর যোগ্যতা
প্রত্যেক সাবালক এবং সুস্থ মনের অধিকারী ব্যক্তি উইল করতে পারে।উইলকারী ব্যক্তি কে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে।কারণ উইল বা অছিয়তের মূল উৎস কোরআন।এটি হাদিসগত আইন। বর্তমান বাংলাদেশ ১৮ বছর পূর্ণ হলে তাকে সাবালক বলে গণ্য করা হয়, যদিও ইসলামিক আইনে সাবালকের বয়স ১৫ বছর। সুতরাং বর্তমান আইনে কেউ ১৮ বছর পূর্ণ না হলে উইল করতে পারবে না।
নাবালকের উইল সাধারণত বৈধ নয়।আবার এই নাবালক সাবালক হয়ে এটি
স্বীকার করে নিলে এটি বৈধ হবে।একইভাবে মাতাল, পাগল বা অপ্রকৃতস্থ
অবস্থায় কেউ উইল করলে সাধারণত এটি বৈধ হবে না।তবে উইল করার পরেও যদি উইলকারী
মাতাল বা পাগল হয়ে যায় তাহলেও এই উইল বৈধ হবে না।মাতাল বা পাগল
অবস্থায় কোন ব্যক্তি বিল করলে পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে গেল সেই উইল বৈধ বলে
গণ্য হবে না।
দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি উইল করলে বৈধ হবে না।কেউ ঋণী থাকলে ওই ঋণের পরিমাণ তার বিষয় সম্পত্তির মূল্যের বেশি হলে তার উইল করা ঠিক হবে না।হত্যাকারীর পক্ষে উইল বৈধ হবে না।কোন ব্যক্তির কার্যকলাপ উইলকারীর আত্মহত্যার কারণ হলে ওই ব্যক্তির বরাবরে উইল বৈধ হবে না।
জন্মগ্রহণ করেনি এমন ব্যক্তি অর্থাৎ অজাত ব্যক্তির বরাবরে উইল বৈধ হবে না।তবে ওই ব্যক্তিকে উইল করার তারিখে মাতৃ গর্ভে সন্তানের ভ্রুনের অস্তিত্ব থাকতে হবে এমনকি ওই সন্তান উইল করার তারিখ হতে ছয় মাসের মধ্যে
আরো পড়ুন : আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করে দাগের তথ্য দেখে নিন
জন্ম লাভ করলে সেই সন্তানের উদ্দেশ্যে উইলটি বৈধ হবে।উইলকারী যার
বরাবরে উইল টি প্রদান করবে ওই গ্রহীতা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে
উইলটি গ্রহনে সম্মত থাকতে হবে।জোরপূর্বক তার উপর কোন প্রকার উইল চাপিয়ে
দেওয়া যাবে না।
অছিয়ত গ্রহীতার যোগ্যতা
মুসলিম আইনের বিধান মতে, যে কোন ব্যক্তির বরাবরে উইল করা যায়।এমনকি একাধিক
ব্যক্তির বরাবরেও একটি উইল করা যাবে।প্রতিষ্ঠানের বরাবরেও সম্পত্তি উইল করা
যায়।ইসলাম বিরোধী না হলে যে কোন ধর্মীয় বা ধাতব্য উদ্দেশ্যে উইল করা
যায়।
উইলের ক্ষেত্রে ধর্মের প্রশ্ন অবান্তর।সর্বক্ষেত্রে অমুসলিমদের বরাবরে উইল বৈধ হবে।তবে শাফী বিধান মতে, এই রূপ উইল গ্রনযোগ্য নয়।তবে যেকোনো মুসলিম আশ্রিত ব্যক্তির নামে উইল করলে তা বৈধ হবে।কিন্তু কোন অমুসলিম দেশের
অমুসলিম, মুসলিম দেশে বসবাস করতে থাকলে তার নামে কোন উইল বৈধ
হবে না।আজাত কিংবা মৃত ব্যক্তি নামে উইল হতে পারে না।তবে উইল করার ৬
মাসের মধ্যে যদি সন্তানের জন্ম হয় তাহলে ওই উইল ল বৈধ হবে।উইল
গ্রহণকারী কে সম্মত থাকতে হবে, জোরপূর্বক তার ওপর কোন প্রকার উইল চাপিয়ে
দেওয়া যাবে না।
কোন একজন ব্যক্তিকে সম্পদ এবং অন্য একজনের বরাবরে ওই সম্পদের ভোগ্য বস্তু উইল করা যায়। যেমন-কোন ব্যক্তিকে একটি বাগান অপর ব্যক্তিকে বাগানের ফল ভোগ করার জন্য উইল করা যায়। এক্ষেত্রে উইলকৃত ভোগ্য বস্তুর সময়সীমা অতিবাহিত হওয়ার পূর্বেই উইল গ্রহীতা মারা গেলে উইলটি বাতিল বলে গণ্য হবে।
আরো পড়ুন : আর এস খতিয়ান যাচাই করে নিন
ওয়ারিশদের বরাবরে উইল করা যায় না।অর্থাৎ কোন ওয়ারিশের সম্পত্তি
ব্যাতিরেখে অন্য ওয়ারিশের নামে্ উইল করা যায় না।ওয়ারিশ নয় এমন আগন্তক
ব্যক্তির নামে এক তৃতীয়াংশ ওয়ারিশদের বিনা সম্মতিতে উইল।সুন্নি মতে এই
নিয়ম কার্যকর হয়ে থাকে।কিন্তু শিয়া মতে, কোন ওয়ারিশের বরাবরে অন্যান্য
ওয়ারিশদের বিনা সম্মতিতে এক-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি উইল করলে ওই
উইল বৈধ বলে গণ্য হবে।
একটি বৈধ উইল কার্যকরী হয় উইলকারীর মৃত্যুর পর।উইল গ্রহে থাকে উইলকৃত
বিষয়বস্তুর স্বীকার করতে হবে।যদি কোন গ্রহীতা উইলকারীর আগে মারা যায় সেই
ক্ষেত্রে ঐ উইলটি অকার্যকর হবে।কোন খাতকের অনুকূলে উইল করা
যায় না।
উত্তরাধিকারের বরাবরে অছিয়ত
ইসলামী আইনে উইল একটি ঐশী ব্যবস্থা এটি পবিত্র কোরআনের নিয়ামক।হেদায়াত মতে,উইল করা আইনসম্মত,তবে তা একটা সীমার মধ্যে।
উইল সম্পর্কে বুখারী শরীফের একটি হাদিসে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর একটি বাণীর মর্মার্থ বিশ্লেষণ করলে উপলব্ধি করা যায়।রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বাণীর মর্মার্থ এই যে,“মৃত্যুর আগে সবাই তার বংশধরদের যথারীতি আদেশ নির্দেশ দিয়ে যাবে এবং আইনের সীমার মধ্যে যতটুকু পারা যায় ততটুকু পরিমাণ সম্পত্তির ব্যবস্থা করে যাবে”।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,তোমরা তোমার ওয়ারিশদের ভিখারি করে রেখে যেও না,সেটা ভালো নয়।
সুতরাং ইসলামী আইনে মিরসের পাশাপাশি দান ও উইলের গুরুত্ব অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।ইসলামী আইনে কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে তার সমগ্র সম্পত্তি দান করতে পারে কিন্তু এক-তৃতীয়াংশের বেশি উইল করতে পারে না।আবার ওয়ারিশের বরাবর উইল করা যায় না।
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনের শেষ ভাষণে বিদায় হজ্জের সময় বলেছিলেন,আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে সকলকে তার প্রাপ্য দিয়েছেন।ওয়ারিশ,মিরসের মাধ্যমে সম্পত্তি পাবে,উইলের মাধ্যমে নয়।
উইল বা অছিয়ত মূলত ইসলামিক আইন।এই ইসলামিক আইনকে অবাধ্য করা মানে মহান
আল্লাহ তায়ালার বিধান গুলিকে নস্যাৎ করা।
কোন একজন উত্তরাধিকারীর বরাবরে উইলের মাধ্যমে সম্পত্তি প্রদান করলে উইলকারীর মৃত্যুর পর অন্যান্য উত্তরাধিকারীগণ এতে সম্মতি প্রদান না করলে ওই উইল বৈধ হবে না।
লেখক এর মতামত
আমি (শামিম মোক্তার) শ্রীপুর সাব-রেজিষ্ট্র অফিসের দলিল লেখক শ্রীপুর,গাজিপুর।অছিয়ত নামা দলিল কি এবং অসিয়ত করার নিয়ম নিয়ে যদি আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করে জানাতে পারেন।
নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url